ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মোনাশ স্টাডি সেন্টার বাঁচাতে মন্ত্রণালয়ের তোড়জোড়? 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২১
মোনাশ স্টাডি সেন্টার বাঁচাতে মন্ত্রণালয়ের তোড়জোড়? 

মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টারের অনুমোদনের পর বিতর্ক দেখা দেওয়ায় তড়িঘড়ি করে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৪ সালের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা বিধিমালাটি হালনাগাদ করতে বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ আগামী ২০ ডিসেম্বর এই বৈঠক করবে। মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বেলা সাড়ে তিনটায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

যদিও ইউজিসি বলছে, তারা বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। শুরু থেকেই তাদের বক্তব্য ছিলো, ২০১৪ সালের বিধিমালাটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে স্টাডি সেন্টার সংক্রান্ত কার্যক্রম চালাতে প্রকৃতপক্ষে তারা আগ্রহী না। বর্তমানে মন্ত্রণালয় একটি স্টাডি সেন্টার খোলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম খোলার অনুমতি বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী কেবল ইউজিসি দিতে পারে। কিন্তু ইউজিসি তাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালানোর কোনো অনুমতি দেয়নি। প্রশ্ন উঠছে, ইউজিসিকে পাশ কাটিয়ে দেওয়া অনুমোদনকে বৈধ করতেই কি তবে এই বিধিমালা হালনাগাদের উদ্যোগ?

স্টাডি সেন্টার নিয়ে বিতর্কের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, মোনাশের স্টাডি সেন্টারের ফাউন্ডেশন কোর্স চালাতে ইউজিসির কাছ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু স্টাডি সেন্টার নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর বিধিমালা সংশোধনে ইউজিসির সব সদস্যকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বিধিমালা সংশোধনে অংশীজনদেরই বৈঠকে ডাকা হয়েছে।  বিধিমালাটি শুধু স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা নয়, শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনারও বিষয় রয়েছে। শাখা ক্যম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে ইউজিসির ভূমিকাই বেশি।   
   
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১) শামিমা বেগম স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বৈঠকে সভাপতিত্ত্ব করবেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সকল সদস্যকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
  
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থগিত থাকা বিধিমালার আওতায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন নিয়ে আপত্তি তোলে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি এবং সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করতে দেওয়ার জন্য আইনে না থাকলেও ‘বিতর্কিত’ বিধিমালা অনুযায়ী মোনাশের স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্প্রতি এই স্টাডি সেন্টারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদনও করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিধিমালা হালনাগাদ করতে বৈঠক ডেকেছে।  

২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টার স্থাপনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদনটি ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার খোলার বিষয়টি স্থগিত রাখা সমীচীন হবে বলে জানিয়ে দেয় ইউজিসিকে। এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির স্টাডি সেন্টার নিয়ে আপত্তি জানালেও নতুন করে চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেয়। নতুন করে স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দিলে আবারও বিতর্ক শুরু হয়।

মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টার কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না সেই রুল জারি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিধিমালা নিয়ে ২০ ডিসেম্বরের বৈঠক ডাকা হয়েছে কিনা প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আফতাব উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, রুলের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এটা রুটিন বসা। এই বিধিমালা ২০১৪ সালের, সময়ের সাথে সাথে হালনাগাদের ব্যাপার সবসময়েই থাকে। তবে রুল হওয়ার পরে বসার বিষয়ে কোন বিধিনিষেধ থাকলে সেটা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে।

গত ৬ ডিসেম্বর আইন বহির্ভূতভাবে দেশে স্থাপিত মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ইউজিসির দেওয়া অনুমোদন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে মামলার বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।  

এরইমধ্যে বিধিনিষেধ হালনাগাদের উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, যদি মোনাশকে সুবিধা দেওয়ার জন্য বিধিমালা হালনাগাদের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে তা অবশ্যই আইন বিরোধী হবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।