খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ।
কুয়েটের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার সেকশন অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন ।
তিনি জানান, ৪৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। সঙ্গে ১৩টি সংযুক্তি রয়েছে। তদন্ত কমিটির সভাপতি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, সদস্য গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আলহাজ উদ্দিন, সদস্য কুয়েটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মাহবুব, বহি:সদস্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) শাহাবুদ্দীন আহমেদ, খুলনা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক ভাইস-চ্যান্সেলরের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে পরে সিন্ডিকেট সভায় তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার প্রচেষ্টার জন্য ৩০ নভেম্বর (মঙ্গলবার) ড. মো. সেলিমের দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতন করেন। সাধারণ সম্পাদকসহ উপস্থিত কর্মীরা হলের প্রভোষ্ট ড. সেলিম হোসেনকে বেশ কয়েকদিন ধরে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন। এরপরে বিকেল ৩টায় বাসায় ফিরে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন।
শিক্ষকের মৃত্যুর দিন রাতে এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া দু’জন সদস্য ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক কল্যাণ কুমার হালদার। তাদের মধ্যে কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে এবং মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) রাতে পাঁচ সদস্যের নতুন এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
শনিবার (০৪ ডিসেম্বর) ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ করায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) ড. সেলিমের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থান থেকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতের তত্ত্বাবধানে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তার মরদেহ বাঁশগ্রামে পুনরায় দাফন করা হয়।
প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বন্ধের মেয়াদ ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জানানো হয়, কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে চালু হবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
এমআরএম/এমআরএ