ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অবশেষে যবিপ্রবিতে ভর্তির সুযোগ পেলেন নিপুণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
অবশেষে যবিপ্রবিতে ভর্তির সুযোগ পেলেন নিপুণ যবিপ্রবির ফটকে নিপুণ বিশ্বাস। ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: আট মিনিট সময়-স্বল্পতার কারণে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মেধাতালিকায় চান্স পেয়েও ভর্তি বঞ্চিত নিপুণ বিশ্বাসকে অবশেষে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় যবিপ্রবির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) আব্দুর রশিদ অর্ণব বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।



তিনি জানান, যবিপ্রবি ভিসি ড. আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) নিপুণ বিশ্বাসকে ভর্তি করানো হবে।

এর আগে, ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৬ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ায় মেধা তালিকার শীর্ষে থেকেও সময়-স্বল্পতার কারণে ভর্তি হতে পারেননি নিপুণ বিশ্বাস। ফলে ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি হওয়ার আশায় গত দুই দিন ধরে ক্যাম্পাসে ঘুরছেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ‘নিপুণকে ভর্তি নিল না যবিপ্রবি!’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে যবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নজরে আসে। এমনকি, প্রতিবেদনটি ভাইরাল হলে সারাদেশে আলোচনার ঝড় ওঠে।

আজ বিকেলে নিপুণ বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি গণমাধ্যমে দেখে স্ব-প্রণোদিত হয়ে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোবাইল ফোনে তার খোঁজ-খবর নেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানোর আশ্বাস দেন।  

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েটিং লিস্ট বা ভর্তির বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীর মোবাইলে। কিন্তু যবিপ্রবি কোনো মেসেজ বা ফোনকল দেয়নি। ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রশাসনের কমপক্ষে এক দিন সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, কেউ ভর্তি বাতিল না করলে নিপুণ ভর্তি হতে পারবেন না।

জানা যায়, রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই দিন বিকেল ৫টায় ভর্তির তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে উপস্থিত হতে বলা হয় নিপুনকে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ভর্তি হতে কম সময় এবং নিপুণের বাড়ি থেকে যবিপ্রবির দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের পরে পৌঁছান নিপুণ। এ কারণেই তাকে ভর্তি নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষ্মীচাপ এলাকার হতদরিদ্র প্রেমানন্দ বিশ্বাসের ছেলে নিপুণ। তার বাবা পেশায় নরসুন্দর। নিপুণ ভর্তি হতে না পেরে হতাশায় পরিবারের কাছে ফিরতেও পারছিলেন না। হতাশাগ্রস্ত নিপুণ ভর্তি বঞ্চিত হওয়ায় ক্যাম্পাসে ঘুরতে থাকেন।  

এদিকে, ১৭তম মেধা তালিকায় থাকা নিপুণের পরিবর্তে ১৯তম মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বগুড়ার বায়েজিদ মল্লিক। মঙ্গলবারও দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে যবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় নিপুণকে। তখনও চোখ তার ছল ছল করছিল।

নীলফামারী থেকে আসা সালাম নামে তার এক সহপাঠী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে বার বার অনেক অনুনয়-বিনয় করেছেন তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আর সময় দিতে রাজি নয়। ভর্তির জন্য কমপক্ষে এক দিন সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এত তড়িঘড়ি করছেন, তারা বুঝতে পারছেন না।

যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার সকালে ফোনকলে নিপুণের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন নিপুণ তার সমস্যার কথা আমাকে জানায়। পরে আমি বিভাগের ডিন স্যারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলি। নিপুণ দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হলে তাকে নিয়ে বিভাগে নিয়ে যাওয়ার আগেই কলেজ কর্তৃপক্ষ মেরিট লিস্টে তিন নম্বরে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে নেন। যবিপ্রবি প্রশাসনের ব্যর্থতায় ওই শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রোববার বিকেলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার পরের দিন সকাল ১০টায় কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে পারে! তার পর ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি নীলফামারীতে। প্রশাসনের অত্যন্ত একটা দিন দেওয়া উচিত ছিল।

ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নিপুণ অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছেলে। ওর সঙ্গে কথা বলে শুনেছি, বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদে-ঋণে টাকা নিয়ে সে ভর্তি হতে এসেছেন। যবিপ্রবি প্রশাসন যথেষ্ট ছাত্রবান্ধব। ছেলেটার দিকে বিবেচনা করে স্যারেরা যদি একটু সদয় হলেই ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হবে।  

নিপুণ জানিয়েছিলেন, রোববার সাড়ে ৫টার দিকে যবিপ্রবির ওয়েবসাইটের নোটিশে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তার কোনো স্মার্টফোন না থাকায় এ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পারিননি। যবিপ্রবি থেকে তার মোবাইল নম্বরে ভর্তির জন্য ফোনকল বা মেসেজ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটাও দেওয়া হয়নি। মধ্যরাতে তার একজন বড় ভাই নিপুণকে ফোনকল দিয়ে ভর্তির বিষয় জানায়।  তখন নিপুণ তাৎক্ষণিক প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছ থেকে ২৩ হাজার টাকা জোগাড় করেন। রাতেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসার জন্য ১৫ হাজার টাকায় রিজার্ভে একটি গাড়িতে যবিপ্রবির উদ্দেশ্য রওনা দেন। কিন্তু যশোর থেকে নীলফামারীর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এবং রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে তার দুপুর ১২টা ৮ মিনিট বেজে যায়। এর মধ্যে ১০টার দিকে তার বিষয়ে একজন বড় ভাই ডিন স্যারের সঙ্গে এ সমস্যার বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু  নিপুণ আসার পরে জানতে পারেন, মেরিট লিস্টে ছেলেটি প্রথমে থাকার পরেও তৃতীয় সিরিয়ালে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এরপর নিপুণ অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও তারা আমাকে ভর্তি নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে তাকে মেসেজ দেওয়ার কথা থাকলেও; তারা দেয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েটিং লিস্টে থাকায় নিপুণ মেসেজ পেয়েছে, কিন্তু এখানকার প্রশাসন কোনো মেসেজ দেয়নি। নিপুণকে যদি আগে থেকে মেসেজ দেওয়া হতো অথবা নোটিশের পরের দিনই সময় না দিয়ে একটা দিন পরে দেওয়া হতো তাহলে নিপুণ সঠিক সময়ে এসে ভর্তি হতে পারতেন।

নিপুণ বলেন, প্রতিবেশি ও স্বজনদের কাছ থেকে সুদে ২৩ হাজার টাকা জোগাড় করে এনেছি ভর্তি হওয়ার জন্য। আমি এখানে এসে ভর্তি হতে পারলাম না। আমি আমার পরিবারকে কী জবাব দেবো? এতগুলো টাকা এখন আমরা কীভাবে শোধ করবো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শেষ! আমার আর পড়াশুনা হবেই না!’

এদিকে, নিপুণকে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে, এমন খবর নিপুণকে জানানো হলে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। এই সুযোগ দেওয়ায় তিনি গণমাধ্যমের প্রতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

>>>নিপুণকে ভর্তি নিল না যবিপ্রবি!

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত দেখতে কিক্ল করুন:

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২২
ইউজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।