ঢাকা: রাষ্ট্রপতি ও দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষা নয়, পুঁথিগত বিদ্যার পাঠ নয়, নোট মুখস্ত করে পাস করার শিক্ষা নয়, আমরা চাই সৃজনশীল মানুষ হবার শিক্ষা এবং কুসংস্কারমুক্ত ও খোলামনের আলোকিত মানুষ গড়ার শিক্ষায় দেশের শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে।
রোববার (২০ মার্চ) বিকেলে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হয়ে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন আবদুল হামিদ।
সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বাংলাদেশ এক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারমান অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদেরকে শ্রম বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে হবে। প্রায়শই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা নিজের আগ্রহ ও পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারে না। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যে বিষয়ে সুযোগ পায় সেটাই পড়তে বাধ্য হয়। এটা উচ্চ শিক্ষার মাপকাঠি হতে পারে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষাদানের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের সংযোগ ঘটাতে হবে। মানবপ্রেম, মনুষত্ব, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর কৌশলকে শিক্ষার সঙ্গে সম্মিলন ঘটাতে হবে।
শিক্ষার্থীরা নিজের আগ্রহ ও পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারে না বলে আক্ষেপ করেন রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যে বিষয়ে সুযোগ পায় সেটাই পড়তে বাধ্য হয়। এটা উচ্চশিক্ষার মাপকাঠি হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে। কারণ শিক্ষার সঙ্গে আগ্রহ আর আনন্দের সম্মিলন না ঘটলে সে শিক্ষা স্থায়ী রূপ পায় না, শিক্ষার উদ্দেশ্যও সফল হয় না। ’
উচ্চশিক্ষার বিস্তার ও মানোন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন আচার্য। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেন।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এমন শিক্ষার্থী দেখতে চাই, যারা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সমাজকে মূল্যবান কিছু দান করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও গবেষণার কাজে আরও আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অধ্যাপনা বিষয়ে অন্যান্য দেশে কী কী কাজ হচ্ছে তা জানার জন্য শিক্ষকদের যথেষ্ট আগ্রহ ও উদ্যম থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার উচ্চ শিক্ষার বিস্তার ও মানোন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে Private University Act-2010। একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী মানবিক ও নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন জ্ঞানী, দক্ষ, দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উপযোগী নাগরিক সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার পাদপীঠ। এখানে মুক্ত চিন্তার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমান বিশ্ব একদিকে যেমন সম্ভাবনাময় তেমনি তা চ্যালেঞ্জিংও বটে। শিক্ষার্থীরা যাতে এই চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে তা নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক তৎপরতার মাঝে সামগ্রিকভাবে শিক্ষাভাবনা সবসময়ই গুরুত্ব পেয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “শিক্ষা দীক্ষা হইল মানব সভ্যতার মাপকাঠি, অথচ আমাদের দেশের অগণিত জনসাধারণকে অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবাইয়া রাখিয়া কোন মুখে আমরা বিশ্বের দরবারে নিজেদেরকে সভ্য জাতি বলিয়া গৌরব করিব”। বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন- “শিক্ষাই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর হতে পারে না”। আজকের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদেরকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এজন্য যে আপনারা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
এনএইচআর