চাঁদপুর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরীফুল হাসান।
সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পরামর্শ করে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিনি এক বছরের কিছু অধিক সময়ের মধ্যে উপজেলার ২৩৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন। যার ফলে ২০২২ সালে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে সক্ষম হয়েছেন। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে ইউএনও’র শতভাগ শহীদ মিনার নির্মাণের এমন উদ্যোগ দেশের মধ্যে উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০টি বিদ্যালয়ে আগে থেকেই শহীদ মিনার থাকলেও ১৫০টিতে ছিল না। ইউএনও গাজী শরীফুল হাসান মতলব উত্তর উপজেলায় যোগদান করার পর থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
এরপর ২০২১ সালে একযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪০টিতে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে বাস্তবায়ন হয়। পরে বাকিগুলোতেও স্থাপন করা হয় শহীদ মিনার। এছাড়া ৫৭টি উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার মধ্যে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার ছিল না, সেগুলোতে একই সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ও স্থানীদের আর্থিক সহায়তায়।
উপজেলার লবাইর কান্দি আল-আমিন আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ওয়ালি উল্যাহ বলেন, ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার ছিল না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে অল্প সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার স্থাপন হয়েছে। এখন বিভিন্ন দিবস শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীসহ উদযাপন করা সম্ভব হচ্ছে।
ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আবুল হাসানাত জানায়, তারা আগে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করত। এখন নিজ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হওয়ায় খুবই আনন্দিত।
৩৯নং মুন্সির কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহাত এবং ২২নং ধনার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত বলে, দিবস আসলে আমরা অন্য প্রতিষ্ঠানে হেঁটে গিয়ে ফুল দিতাম। অনেক সময় আমাদের প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হতো। শহীদ মিনার নির্মাণ হওয়ায় এবছর আমরা এখানেই ফুল দিয়েছি।
নিশ্চিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আরিফ উল্যাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজসহ শিক্ষা কমপ্লেক্স। এখানে শহীদ মিনার ছিল না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় সুন্দর একটি শহীদ মিনার নিমার্ণ করা হয়েছে। এখন সবগুলো প্রতিষ্ঠান খবুই সু-শৃঙ্খলভাবে সব দিবস উদযাপন করতে পারছে।
মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আমাদের ডিজাইনের মধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪০টি শহীদ নির্মাণ করেছেন। যাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরীফুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমি উপজেলায় যোগদানের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে দেখি শহীদ মিনার নেই। খোঁজ নিয়ে দেখলাম ১৮০টির মধ্যে ১৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নেই শহীদ মিনার। সরকারিভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য এলজিইডি কর্তৃক দু’টি নকশা প্রণয়ন করা আছে। দুটি নকশার যেকোনো একটি দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কথা বলা রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে স্থানীয় জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এখানে সরকার সরাসরি কোনো অর্থায়ন করবে না। যার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ উদ্যোগ থেমে থাকে। আমি বিষয়টি নিয়ে ৪ মাস প্রতিষ্ঠান পরিচালন পর্ষদ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা করে ২৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
এসআইএস