খুলনা: প্রথমে একজন ভালো মানুষ হতে চাই। এরপর একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।
এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার জাতীয় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করা খুলনার সুমাইয়া মোসলেম মীম বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এভাবে বলেন।
সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি জানান, লিখিত পরীক্ষায় সুমাইয়া মোসলেম মীম ৯২ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছেন। সবমিলিয়ে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৯২ দশমিক ৫।
মীম ১ এপ্রিল খুলনা মেডিক্যাল কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। মীমের বাবা খুলনার ডুমুরিয়া কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন সরদার। মা কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট খাদিজা খাতুন। পরিবারের সঙ্গে তিনি বর্তমানে খুলনা শহরের মৌলভীপাড়ার টিবি বাউন্ডারি রোডে বসবাস করেন।
মীম খুলনা মহানগরীর ৪৭ খান জাহান আলী রোডের ডিএমসি স্কলারে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং করতেন। ফলাফল ঘোষণার পর বাবাসহ মীম তার কোচিং সেন্টার ডিএমসি স্কলার মেডিক্যালে হাজির হন। সেখানে সহপাঠী ও কোচিংয়ের শিক্ষকসহ অন্যান্যরা তাদের অভিনন্দন জানান।
মেডিক্যাল পরীক্ষায় দেশসেরা ফলাফলের পেছনের গল্প তুলে ধরে মীম বাংলানিউজকে বলেন, মহান আল্লাহতালার অনেক রহমতে আমি এ অবস্থানে এসেছি। এত বেশি প্রত্যাশা আমার ছিল না। তারপরও আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। যে কারণে আমি কৃতজ্ঞ। সবার প্রথমে আমি আমার আব্বু আম্মার কথা বলবো। এই দুইটি বছরে আমার জন্য তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বিশেষ করে আমার আম্মুকে যশোরের কেশবপুরে গিয়ে চাকরি করতে হয়েছে। তিনি হাসি মুখে সব কিছু করেছেন শুধু আমার জন্য, যাতে ভালো ফল করতে পারি। তাদের হাসি মুখটা যে দেখতে পারছি এর চেয়ে খুশির আর কিছুই নেই আমার জন্য। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। শুধু আম্মুর ইচ্ছায় এস্থানে এসেছি। এখন যেহেতু ভালোভাবে এসেছি বাকিটাও ভালোভাবে শেষ করতে চাই।
মীম বলেন, শুরু থেকেই ডা. সিয়াম আমাকে ছোট বোনের মতো গাইড করেছেন। প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত আমার অন্যান্য শিক্ষকদের স্নেহ, দোয়া আমাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
আগামী দিনের পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মীম বলেন, বুঝে পড়াশোনা করতে হবে। সবাই ভাবে মুখস্থ করতে হবে। কিন্তু না, যা পড়ছো সেই বিষয়টা পরিষ্কার বুঝতে হবে। মুখস্ত করলে পরদিন ভুলে যেতে পারো। কিন্তু বুঝে পড়লে সেটা কাটিয়ে ওঠা যায়। কোচিংয়ের অনেক পরীক্ষায় ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারতাম না। তারপরও বুঝে পড়ার কারণে ফল ভালো হতো।
মীম বলেন, ২০১৯ সালে যশোর বোর্ডের অধীনে ডুমুরিয়া গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। ২০২১ সালে একই বোর্ডের অধীনে সরকারি এমএম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাই। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা আমার সাফল্য অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও ভালোবাসা আমাকে প্রতিনিয়ত সাহস যুগিয়েছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
মীমের বাবা মোসলেম উদ্দিন সরদার বলেন, গ্রাম থেকে লেখাপড়া করে এতো ভালো করবে এটা ভাবতেই পারিনি। অনেক আনন্দ লাগছে, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া।
তিনি বলেন, মীমের মা সারাদিন চাকরি করে প্রায় সারারাত ওর পাশে জেগে বসে থাকতো। এতোদিনের কষ্টের শেষে ওদের আনন্দেই আমার বুক ভরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২২
এমআরএম