ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পাবিপ্রবির শিক্ষক ও পিডির পাল্টাপাল্টি জিডি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
পাবিপ্রবির শিক্ষক ও পিডির পাল্টাপাল্টি জিডি পিডি  আজিজুর রহমান (বাঁয়ে) ও সাবেক ডিন ড. এম আবদুল আলীম

পাবনা: নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) নিয়ে।  

বর্তমানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ ফাঁকা থাকায় অভিভাবকহীনভাবে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

 

এর ফলে নানা ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জি এম আজিজুর রহমান‌ এবং মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. এম আবদুল আলীম একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছেন সদর থানায়। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।  

জিডির বিষয় নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চেয়ে উভয়পক্ষ সম্প্রতি পাবনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পাবিপ্রবির পাঁচশ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নির্মাণকাজ পরিদর্শন করতে আসে। তিনি আসার পর সাবেক উপাচার্য রোস্তম আলীর বিপক্ষের গ্রুপের ১০-১২ জন শিক্ষক তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রকল্পের পিডি নিয়োগে অনিয়মসহ প্রকল্পের ১০ কোটি টাকার বই কেনায় নানা অনিয়মসহ বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা অডিট আপত্তির বিষয়টি অবহিত করেন। সব ধরনের অনিয়মের প্রমাণের কাগজপত্র তুলে ধরেন তারা। শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. হারুন-অর রশিদ, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম আবদুল আলীম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন, সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আওয়াল কবির জয়, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসেন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসান, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানাসহ অনেকে।
 
সূত্র আরও জানায়, অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে মিটিং হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হাসিবুর রহমানের কক্ষে একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) জি এম আজিজুর রহমান সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এসময় ১০ কোটি টাকার বই কেনায় অনিয়ম ও কোটি কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অডিট আপত্তি নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে পিডির কথা কাটাকাটি হয়। তখন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।  

পরে ওই গণমাধ্যমে ‘পাবিপ্রবিতে নানা দুর্নীতির অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক আজিজুর রহমান তার নামে কুৎসা রটনা, ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তুলে দুই শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন। পরে ড. আবদুল আলীম পাল্টা আরেকটি জিডি করেন প্রকল্প পরিচালক আজিজুর রহমানের নামে।  

জিডিতে আবদুল আলীম উল্লেখ করেন, ১০ কোটি টাকার বই কেনাসহ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের বিষয়ে পিডি আজিজুর রহমানের নামে অডিট আপত্তির বিষয়ে বলতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তার কাছে থাকা লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করার হুমকি দেন। তাই তার আগ্নেয়াস্ত্রটি পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার জন্য এবং তারসহ অন্য শিক্ষকদের নিরাপত্তা দেওয়ার অনুরোধ করে জিডিটি করেন ওই শিক্ষক।  

একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজিুর রহমান মাঝে মধ্যেই শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তার সঙ্গে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র থাকে, যেটি দিয়ে ক্যাম্পাসের অনেককেই তিনি এরই মধ্যে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন। তার আচার-আচরণ এতটাই খারাপ যে তার সঙ্গে কেউ কথা বলতে গেলে কাউকে মানুষ মনে করেন না। প্রকল্পের কোনো কথা তিনি কাউকে বলেন না। সাবেক ভিসির সঙ্গে মিলে তিনি সব অপকর্ম করেছেন।  

ঘটনার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ভিসি চলে যাওয়ার পরে তার সঙ্গে মিলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আমার নামে কুৎসা রটাচ্ছেন। প্রতিনিধি দলের কাছে আমার নামে মিথ্যা কথা বলছেন। তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। আমি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। তাই জিডি করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. এম আবদুল আলীম জিডির কথা স্বীকার করে বলেন, প্রকল্প পরিচালক আজিজুর রহমান শিক্ষকদের সম্মান করেন না। সব সময় অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। প্রকল্পের নানা অনিয়মের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। ঢাকা থেকে আসা প্রতিনিধি দলের কাছে আমরা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেছি। তিনি আমাকেসহ আরো অন্যদের গুলি করা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। তার ভয়ে অনেকেই কথা বলেন না। সব সময় ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কোটি কোটি টাকার অনিয়ম করেছেন। তদন্ত করলে সব কিছু প্রমাণ হয়ে যাবে। তার আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশের হেফাজতে রাখা দরকার। আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।

পাবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্ম বলেন, উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। অভিভাবক না থাকলে যা হয়। পাল্টাপাল্টি জিডির ঘটনা তারই প্রমাণ। নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের কথা কাটাকাটির ঘটনা আমার সামনেই ঘটেছে। তবে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা আমি জানি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।