ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে তৈরি হয়নি ভর্তি পদ্ধতির 'স্থিতিশীল কাঠামো' 

মঈন উদ্দিন, রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২২
রাবিতে তৈরি হয়নি ভর্তি পদ্ধতির 'স্থিতিশীল কাঠামো' 

রাবি: করোনা ভাইরাসের ক্ষতি বিবেচনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নতুন পদ্ধতি অনুসারে এবার তিনটি ইউনিটের প্রতিটিতে বাছাই করা ৭২ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাবে।

আগে ৪টি ইউনিটের ৪৫ হাজার করে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেত। এবার ভর্তি পরীক্ষায় বাছাইয়ের সীমাবদ্ধতা বেশি করা হলেও অনেক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

এদিকে, দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা ইতিবাচক। তবে পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন ফি, মূল আবেদন ফি, প্রশ্নপত্রের মান ও বাছাই করার পদ্ধতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাওয়া প্রয়োজন। তবে হঠাৎ করে পরীক্ষার আগে সেটি জানানো বা নির্দিষ্ট একটি বছরের জন্য এমন সুযোগে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। দ্বিতীয়বার সুযোগ প্রতি বছরই থাকা প্রয়োজন। হুট করে দ্বিতীয়বারের সুযোগ দেওয়া আবার সেটি বন্ধ করে দেওয়া ভালো কিছু নয়। এমন সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অস্থিরতার প্রকাশ। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনের জন্য কোনো ফি নেওয়া উচিত নয় বলে মত তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মাদ মিজানউদ্দিন ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করেন। পরবর্তী উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান ২০১৭-১৮ সালে এই সুযোগ চালু করেন। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিনিই আবার এই সুযোগ বন্ধ করেন। এরপর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য আবারও এই সুযোগ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপ-কমিটি জানায়, এবার তিনটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ইউনিটে ৭২ হাজার বাছাই করা শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবেন। প্রাথমিক আবেদনের জন্য বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে জিপিএ-৩.৫ ও দুটি মিলিয়ে কমপক্ষে ৮ থাকতে হবে। বাণিজ্যের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে জিপিএ-৩.৫ ও দুটি মিলিয়ে কমপক্ষে ৭.৫ থাকতে হবে। এছাড়া মানবিকের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে জিপিএ-৩ ও দুটি মিলিয়ে কমপক্ষে ৭ থাকতে হবে। প্রাথমিক আবেদনে ফলাফলের ভিত্তিতে ৭২ হাজার শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার জন্য মনোননীত করা হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের আবেদন ফি ১১০০ (এগারো শ’) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ২৩০ শিক্ষার্থী। আগের বার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অটো পাস দেওয়ায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।  

বিজ্ঞান বিভাগের জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা শুধু আবেদন করলেও প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী কোনোভাবেই পরীক্ষা দিতে পারবে না। এছাড়া দ্বিতীয় বার সুযোগ থাকায় আগের বার ‘চান্স’ পায়নি এমন জিপিএ-৫ ধারীরা আবেদন করবে। এতে প্রথমবারের 
ভর্তীচ্ছুদের মধ্যে অনেক বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসা থেকে বঞ্চিত হবে। কোনো মাপকাঠিতে এখন শিক্ষার্থীদের বাছাই করে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

ভর্তি পরীক্ষার বাছাইকরণ প্রক্রিয়াকে অসমর্থন জানিয়ে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর আবেদন করার নূন্যতম যোগ্যতা আছে, তাদের সবাইকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া উচিত। এছাড়া 
শিক্ষার্থীদের জন্য মূল আবেদন ফি ১১০০ টাকা যথেষ্ট বেশি। এটি আরও কম হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষার ফর্মের মূল্য খুব কম থাকা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফি যদি সার্বিকভাবে ইউজিসি নির্ধারণ করে দেয় তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হয়। এছাড়া প্রাথমিক আবেদনের জন্য কোনো ফি থাকা উচিত নয়।

ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিটি মানুষের দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়া উচিত, সেদিক থেকে আমি দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগের পক্ষে। তবে এ সুযোগ যে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হচ্ছে সেটি হঠকারিতার। এসব হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিরতার প্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থিতিশীল ভর্তি পদ্ধতি থাকা উচিত।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হলো একটি পাবলিক পরীক্ষা। যেটির স্বচ্ছতার জন্য আয় ও ব্যয়ের হিসেব প্রকাশ করা প্রয়োজন। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বিষয়ে তিনি জানান, গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্রের মান হতাশাজনক। প্রশ্নে ব্যাকরণ ও ভাষাগত মান একেবারেই থাকছে না। দীর্ঘ দিন এমন হওয়ার পরও কাউকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না এটি আরও হতাশার। এছাড়া বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঙ্গে কিছু লিখিত পরীক্ষা নেওয়া করা হলে তুলনামূলক ভালো শিক্ষার্থী পাওয়া যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান রাজু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার সুযোগ পাবে এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে এটি শুধু এক বছরের জন্য নয়, আগামী কয়েক বছর বা একটি প্রশাসন থাকা পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত স্থিতিশীল হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া এমন সুযোগের নিয়মিত পরিবর্তন হলে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুসারে নূন্যতম যোগ্যতাধারীকে পরীক্ষায় বসানো উচিত। কারণ প্রস্তুতি ভালো থাকলে কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও ভালো কিছু করতে পারে। প্রয়োজনে স্বায়ত্ত্বশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনার ক্ষতি বিবেচনায় মূলত এবারের জন্য দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার জন্য সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। যদিও করোনার মধ্যে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করে পাস করেছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী বাছাই করা শিক্ষার্থীরাই শুধু ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার মূল আবেদন ফি আগামীতে হ্রাস করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২২
এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।