ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

যে বৃক্ষ ঘিরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম, সেটিই আজ প্রাচীরের বাইরে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
যে বৃক্ষ ঘিরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম, সেটিই আজ প্রাচীরের বাইরে! এটি সেই বটবৃক্ষ, এর নিচে এবং ডালে বসে বাঁশি বাজাতেন দুখু মিয়া

জাতীয় কবির জন্মদিন আজ। দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ধরে রাখতে এদেশে নির্মিত হয়েছে বহু স্থাপনা।

কিশোর নজরুল যে বটবৃক্ষের নিচে বসে বাঁশি বাজাতেন, সেই বৃক্ষটিকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ত্রিশালের শুকনি বিলের পাশে নজরুলের নামে গড়ে উঠেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটাই নজরুলের নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর যে বৃক্ষটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় জন্ম নিলো, সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে সেই বটবৃক্ষকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ছুঁড়ে ফেলেছে প্রশাসন! 

জানা যায়, ২০০৬ সালে ১৫ একর জমির ওপর নির্মিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু থেকে বটবৃক্ষের পাশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থাকলেও আস্তে আস্তে ভবন নির্মাণের নামে বৃক্ষটিকে আড়াল করা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় বটগাছটিকে বাইরে রেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর গড়ে তোলে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে নজরুলের স্মৃতিধন্য বৃক্ষটি ক্যাম্পাসের বাইরে ও ভবনের আড়ালে থেকে যায়। এ গাছের নিচে এখন চায়ের দোকান আর টং দোকানের বাহারি সমাহার।
আজ থেকে ১০৭ বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছিলেন কিশোর দুখু মিয়া। দুখু মিয়ার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে দারোগা রফিজউল্লাহ তাকে ভর্তি করান দরিরামপুর ইংরেজি হাইস্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমি)। প্রথমে কাজীর শিমলা দারোগা বাড়িতে থাকলেও যাতায়াতের কষ্ট লাঘবের জন্য দারোগা সাহেব দুখু মিয়াকে ত্রিশালের নামাপাড়ায় জায়গির রাখেন। সেই দুখু মিয়া পরবর্তিতে হয়ে উঠেন বাঙালির বিদ্রোহী কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। স্বাধীনচেতা নজরুল ইসলাম মাঝে মধ্যে স্কুল বাদ দিয়ে শুকলি বিলের পাশে বটবৃক্ষে চড়ে বাঁশি বাজাতেন। যে বটগাছে বসে দুখু মিয়া বাঁশি বাজাতেন, সেই গাছটিই এখন নজরুল বটবৃক্ষ নামে পরিচিত।  

নজরুলের স্মৃতি ধরে রাখতে বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করেই নজরুলপ্রেমীরা দাবি করেন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। সেই বটগাছের পাশেই শুকনি বিলে ৯৩ বছর পর ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কবি নেই, কিন্তু বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে ১৫ বছরে পদার্পণ করা বিশ্ববিদ্যালয়টি পিছিয়ে না থাকলেও অনাদর অবহেলায় রয়েছে বটগাছটি। এতে নজরুলপ্রেমীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতায় এমন কাণ্ড ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।  

সত্তরের দশকে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পি এ নাজির নজরুলের  স্মৃতিবিজড়িত বটগাছের গুরুত্ব অনুভব করে প্রথমবারের মতো এর চারপাশে পাকা বেদী করেন। ত্রিশালে নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত সব স্থাপনা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও বটগাছটি একেবারেই নিগৃহীত।  

নজরুল গবেষক এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজের উপ-পরিচালক রাশেদুল আনাম জানান, কালের পরিক্রমায় বটগাছ ব্যতীত নজরুলের  স্মৃতিবিজড়িত সব জায়গার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার সাধিত হলেও একমাত্র জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে বটগাছটি। যেহেতু নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত জমি অধিগ্রহণ করে যথাযথভাবে বটগাছটিকে সংরক্ষণ করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ড. হাফিজুর রহমান বলেন, কিশোর নজরুল এই বটবৃক্ষের নিচে বাঁশি বাজাতেন। বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করেই এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুরুতে ১৫ একর জমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা করলেও আমরা ধাপে ধাপে ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছি। প্রথম দিকে আমরা জানতাম বটবৃক্ষের জমিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তাই অধিগ্রহণে জটিলতা ছিল। তবে সম্প্রতি আমরা জানতে পারি, এই জমিটি মালিকানাধীন। নজরুলের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বটবৃক্ষটি সংরক্ষণ প্রয়োজন। আমরা পরবর্তী পরিকল্পনায় এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।  

স্থানীয় ও নজরুলভক্তরা বলেন, যে বটগাছকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও বটগাছটি সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যা জাতীয় কবির স্মৃতিকে অবমাননার সমতুল্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর নিজস্ব সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে বটগাছটিকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখা হয়েছে। আমরা নজরুলপ্রেমীরা এটা মেনে নিতে পারি না।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি কিছুদিন হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। এর আগে কখনো এ ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি বলে আমি জেনেছি। আমাদের জাতীয় কবির স্মৃতি ধরে রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নজরুল বটবৃক্ষকে বিশ্বদ্যিালয়ের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।