ময়মনসিংহ: করোনাকালে ২০২০ সালে অটো পাসে এসএইচসি পরীক্ষার ফলাফল ভালো হওয়ায় উৎসাহ বোনাস হিসেবে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৮৬০ টাকা বিল করেছে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি সম্প্রতি প্রকাশ হওয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে।
তবে পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন না করে কোনো ধরনের প্রণোদনা বা উৎসাহ বোনাস গ্রহণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল।
তিনি বলেন, কাজ না করে এ ধরনের বোনাস গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আছে। তারা যদি এমন করে থাকে, তবে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
একই মন্তব্য করেছেন ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
অভিযোগ উঠেছে, কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাকির হোসেনের নিকট আত্মীয় হওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে বয়স বিধি লঙ্ঘন করে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ২০১৮ এর ১১(৬) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ’ কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বর্তমানে অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বয়স প্রায় ৭৩ বছর।
সংশ্লিষ্ট একাধিক শিক্ষক সূত্র জানায়, ঢাকা বোর্ডে দশম স্থান অর্জনকারী এই কলেজে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বর্তমানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পূর্বের অধ্যক্ষকে অবৈধভাবে অপসারণসহ নানা ঘটনায় বর্তমানে কলেজের পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কয়েকটি মামলাও চলমান আছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বয়স সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমার বয়স ৭৩ বছর। তবে কর্তৃপক্ষ নিয়ম মেনেই আমাকে নিয়োগ দিয়েছে, আইনের ব্যতিক্রম হলে অবশ্যই তারা তা করতো না।
তিনি আরও বলেন, অটো পাসের ফলাফল ভালো হওয়ায় উৎসাহ বোনাস ময়মনসিংহের সব কলেজই নিয়েছে। ফলে করোনার দুর্যোগের কারণে আমার কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সবাই বলায় আমিও উৎসাহ বোনাস নিয়েছি।
এদিকে কলেজের একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর অভিযোগ, বর্তমানে কলেজটিতে দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন বাকৃবির প্রফেসর ড. জাকির হোসেন। সম্প্রতি তিনি কলেজের দুজন অস্থায়ী শিক্ষককে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।
তবে গত কয়েক দিন আগে কলেজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাকির হোসেন কুড়িগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেনে। এতে চেয়ারম্যান পদটি হাত ছাড়া হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আর এ কারণে তিনি অনৈতিক সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. জাকির হোসেন বলেন, কোনো প্রার্থীর সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া আমি উপাচার্য পদে নিয়োগ পেলেও এখানে চেয়ারম্যান থাকতে আইনি কোনো বাধা নেই। তবে আমি চাইলে পদ ছেড়ে দিতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
এমজেএফ