ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পানি খেতে ক্লাস থেকে বের হওয়ার শিক্ষার্থীকে পেটালেন দুই শিক্ষক! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
পানি খেতে ক্লাস থেকে বের হওয়ার শিক্ষার্থীকে পেটালেন দুই শিক্ষক! 

নাটোর: ক্লাস থেকে বাইরে টিউবওয়েলে পানি খেতে যাওয়ায় নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কামরুল হাসান কমল (৪২) ও মাসুদ রানা (৩৫) নামে ওই বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীর বাবা মো. কালাম হোসেন।

 

বৃহস্পতিবার (০২ জুন) দুপুরে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (৩১ মে) বেলা সাড়ে ১১টার সময় ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।  

বুধবার (০১ জুন) ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি তুচ্ছ ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। তবুও ব্যাপারটি আন্তরিকভাবেই দেখভাল করছে পুলিশ।  

শিক্ষক কামরুল হাসাম কমল জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মৃত কালাম মাস্টারের ছেলে এবং মাসুদ রানা একই উপজেলার পরানপুর গ্রামের মৃত বাদশার ছেলে। ওই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শিফটে দুই হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।  

এদিকে থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম উপজেলার রামেশ্বরপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কালাম হোসেনের ছেলে মো. শাকিল হোসেন (১৩) রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। গত মঙ্গলবার প্রতিদিনের ন্যায় বেলা ১১টার সময় স্কুলে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ে টিফিন দিলে শাকিল বাইরে থেকে কিছু খাবার খেয়ে ক্লাস রুমে যায়।

দুইটি ক্লাস শেষে শাকিল আবারও ক্লাস রুমের বাহিরে টিউবওয়েলে পানি খেতে যায়। পানি খেয়ে ক্লাসে প্রবেশের পর ওই দুই শিক্ষক অন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে শাকিলকে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে মারধর করে। এতে তার শরীরে কালো দাগ পড়ে যায়। ছুটির পর বিদ্যালয় থেকে ফিরে বিষয়টি তার বাবাকে খুলে বলে। পরে শিক্ষার্থীর বাবা কালাম হোসেন ছেলে শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাসায় যান। কিন্তু সেখানে কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যান।  

পরে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানান। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে আপোসে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবক কালাম হোসেন ওই শিক্ষকের নামে ছেলেকে মাধরের অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।  

শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. কালাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ের ভিতরে ক্লাস রুম থেকে টিউবওয়েলে পানি খেতে যাওয়ায় তার ছেলেকে ওই দুই শিক্ষক মারধর করেছে। একজন ধরে রেখেছে, অন্যজন প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে পিটিয়েছে। এতে তার শরীরে কালো দাগ পড়ে যায়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অন্য শিক্ষার্থীদের মুখে তিনি শুনেছেন, কারণে-অকারণে ওই শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মারধর করে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যয়বিচার চান।  

এ ব্যাপারে কথা বলতে ওই দুই শিক্ষকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া যায়নি।  

তবে স্থানীয়রা বলছেন, বিষয়টি অতি তুচ্ছ, কেন বিষয়টিকে এতো বড় করে দেখা হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের একটু শাসন করতেই না পারে, তাহলে ছেলে-মেয়েরা কিভাবে আদব-কায়দা শিখবে।

প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ক্যাপ্টেনের অনুমতি ছাড়াই বাইরে বের হয় শাকিল। তাকে ওই সময় বের না হয়ে পরে বের হতে বললে ক্যাপ্টেনকে ধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরে যায় শাকিল। এ ঘটনায় ক্যাপ্টেন তাৎক্ষণিকভাবে  কামরুল ইসলাম নামে একজন সহকারী শিক্ষকের কাছে নালিশ দেয়।  

এ সময় ওই শিক্ষক শাকিলকে পিঠে দুই-তিনবার থাবা দিয়ে সর্তক করেন। যাতে ফের এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। কিন্তু এ নিয়ে শিক্ষার্থী শাকিল উল্টো ক্যাপ্টেনকে বলে, শিক্ষককে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছো স্কুল ছুটির পর তোমাকে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এতে ওই ক্যাপ্টেন পুনরায় শিক্ষকদের জানালে তারা দুই শিক্ষক মিলে শাকিলকে শাসন করেন এবং তাকে দুই-একটি বেত্রাঘাত করেন।  

প্রধান শিক্ষক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনা যেহেতু বিদ্যালয়ের। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অভিভাবক তাকে জানাতে পারতেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। কিন্তু সেটি না করে শিক্ষার্থীর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এটা কোনোভাবে আশা করা যায় না।  

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বাংলানিউকে বলেন, বড়াইগ্রামের রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করতে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।