ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জবিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
জবিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির অভিযোগ পাওয়া গেলে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে গত এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান খন্দকারকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

একই সাথে উল্টো ভুক্তভোগী ৬ জনের বেতন ভাতা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তবে তদন্ত কমিটি গঠনের পর প্রায় আড়াই মাস কেটে গেলেও এ ঘটনার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি কমিটি। ফলে মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও বেতন বন্ধ থাকায় ভোগান্তি কাটছে না সেই কর্মচারীদের। তদন্ত কমিটির দাবি গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য তদন্ত কাজে কিছুটা বিলম্ব ঘটছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি গার্ড ও এমএলএসএস (পিয়ন) পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন মনির হোসেন ও কাজী মহিন উল্লাহ। দুটি পদই ২০তম গ্রেডের। কিন্তু দু’জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৮তম গ্রেডের সিনিয়র কুক পদে। একইভাবে সিকিউরিটি গার্ড মোহাম্মদ জিহান ও এমএলএসএস জামাল হোসেন স্ব-পদে আবেদন করে নিয়োগ পান ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক পদে। এমএলএসএস আব্দুল আলিম নিয়োগ পেয়েছেন বাস হেল্পার পদে।

অপরদিকে, ২০২২ সালের ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম সিন্ডিকেট সভায় চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারীদের একটি তালিকা করা হয়। তালিকা প্রকাশের ৪ দিন পর ৮ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে ১৬তম গ্রেডের সহকারী মেকানিক পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের লিফট অপারেটর পদে ৪ জন, ১৯তম গ্রেডের মেকানিক হেলপার পদে ১ জন ও ২০তম গ্রেডের অফিস সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও সমমানের পদে ১৯ জন চাওয়া হয়।

তবে সেই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না থাকার পরও ১৮তম গ্রেডের সিনিয়র কুক, ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক, বাস হেলপার ও কমনরুম গার্ল হিসেবে ৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গ্রেড পরিবর্তন করে নিয়োগ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর থেকে বেতন বাবদ বাড়তি অর্থ খরচের ব্যাখ্যা চেয়ে উপাচার্যের কাছে নোট পাঠানো হলে এই ৬ জনের বেতন ভাতা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮৪তম সিন্ডিকেটের সিরিয়াল ক্রমেও অসামঞ্জস্য দেখা যায়। বাস হেলপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আব্দুল আলিমের চাকরি ছিল এমএলএসএস হিসেবে। তার সিরিয়াল ক্রম ২৬। সুইপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বীনা রানী দাসও এমএলএসএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তার সিরিয়াল ক্রম ২৯। কুক পদে নিয়োগ পাওয়া কাজী মহিন উল্লাহ এর এমএলএসএস সিরিয়াল ক্রম ৩৬, কমনরুম গার্ল হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাবেয়া বেগমের এমএলএসএস ক্রম ৪৩। কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জামাল হোসেন ছিলেন সঙ্গীত বিভাগের এমএলএসএস কর্মচারী। তার ক্রম ৬১।

সহকারী কুক পদে নিয়োগ পাওয়া নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ জিহান নিরাপত্তা প্রহরী ক্রমে ৭, বাজারকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. ইছহাক শেখ নিরাপত্তা প্রহরী ক্রম ৮ ও অপর সহকারী কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. মনির হোসেনের নিরাপত্তা প্রহরী পদে ক্রমিক ছিল ৯।

স্ব স্ব পদে তালিকা ব্যত্যয় ঘটিয়ে অন্য পদ থেকে পছন্দের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কর্মচারীদের। বর্তমান বেতনভাতা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ভেঙে পড়েছেন মানসিকভাবে। অতি দ্রুত বিষয়টির সুরাহা চান তারা।

ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা আমাদের স্ব-পদেই আবেদন করি। এখন আমাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে গ্রেড ও পদ কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে, সেটা জানি না। প্রশাসন আমাদের যেভাবে নিয়োগ দিয়েছে আমরা সেটাই পেয়েছি। এখানে আমাদের তো কোনো দোষ নেই। আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস ধরে। না খেয়ে মরার মতো অবস্থা আমাদের।

এ বিষয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান খন্দকার বলেন, বিষয়টি তদন্তের কাজ আমরা একটি পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে রেখেছি। তবে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ব্যস্ততা থাকায় দেরি হচ্ছে আপাতত। তবে তদন্তের বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব সতর্ক। ভর্তি পরীক্ষা শেষেই তদন্ত কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করি।

কোনো পক্ষ তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ এ বিষয়ে কিছু বলেনি। আমরা পরিপূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছি। সাধারণত কেউ দোষ করেও অস্বীকার করে। সুতরাং আমরা স্বাধীনভাবে তদন্ত করে এর রিপোর্ট জমা দেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক ড. কাজী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, বিষয়টি সুরাহা হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই কর্মচারীরা বেতন পাবে কি পাবেন না, এটি কর্তৃপক্ষই জানে। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।