ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভয়ঙ্কর শাবিপ্রবির গাজী কালুর টিলা!

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
ভয়ঙ্কর শাবিপ্রবির গাজী কালুর টিলা! ছবি: বাংলানিউজ

শাবিপ্রবি (সিলেট): টিলা আর সমতল ৩২০ একর জায়গা নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় টিলা।

যেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে গাজী কালুর টিলা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।

শাবিপ্রবির ক্যাম্পাসের একাডেমিক, প্রশাসনিক ভবনগুলো কাছাকাছি জায়গায় সীমাবদ্ধ হওয়ায় টিলা এলাকাগুলোতে খুব বেশি যাওয়া-আসা করে না শিক্ষার্থীরা। তবে পড়াশোনা ফাঁকে ফাঁকে একটু স্বস্তি খুঁজতে টিলাগুলোতে বিচরণ করে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

এরই অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত টিলাগুলোতে পিকনিক, চড়ুইভাতি, খেলাধুলা, আড্ডাসহ বিভিন্ন চিত্ত বিনোদনের আয়োজন করা হয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কেউ বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যান, কেউ আড্ডা দেন, কেউ গাজী কালুর মাজারে যান। তবে প্রয়োজন ব্যতীত কেউ সেখানে যান না বললেই চলে। এছাড়া টিলার জায়গাগুলো একটু নির্জন হওয়াতে সন্ধ্যার আগেই হল কিংবা মূল ক্যাম্পাসে ফেরে আড্ডা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। আবার অনেকে দলবল নিয়ে রাতেও আড্ডা বা পাহাড় বিলাসের জন্য যায় টিলাগুলোতে।

এ টিলাগুলোর নির্জনতাকে কাজে লাগিয়ে ছিনতাইয়ের সুযোগ নেন ছিনতাইকারীরা। এতে ক্যাম্পাসের পাশ্ববর্তী টিলারগাঁও, সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে, তার নিয়ে সুড়ঙ্গ করে ক্যাম্পাসে ধূমপান, মাদক সেবন কিংবা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসে বহিরাগতরা। তাতে দিনে বা সন্ধ্যায় যাদের একা পায় তাদের ছুরি বা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল মানিব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে যায়। অনেকে মোবাইল, মানিব্যাগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ছুরিকাঘাত করে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যান ছিনতাইকারীরা।

এদিকে গাজী কালুর টিলাটি ক্যাম্পাসে অবস্থিত দ্বিতীয় ছাত্রী হল বেগম সিরাজুন্নেসা হলের সম্মুখভাগ থেকে একটু দুরে অবস্থিত। হল থেকে সেখানে যেতে সময় লাগে ৫ মিনিটের মত। ক্যাম্পাস থেকে হেঁটে গেলে লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। গাজী কালুর টিলাটি মূল ক্যাম্পাস থেকে একটু নির্জন এলাকায় হওয়ায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া অথবা কোনো আয়োজন ছাড়া খুব একটা সেখানে যায় না শিক্ষার্থীরা। দিনের বেলাতেই অনেকটা নীরব থাকে এলাকাটি, সন্ধ্যার পর হয়ে পড়ে পুরো নিস্তব্ধ জনশূন্য। তাতেই ছিনতাই কিংবা যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে সাহস পায় ছিনতাইকারীরা।

শাবিপ্রবির মূল ক্যাম্পাস এবং একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল টিলার দিকে না থাকায় সেদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটা কম বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। বুলবুলকেও ছুরিকাঘাত করা হয় এ গাজী কালুর টিলায়। তাকে হত্যার পর আলোচনার তুঙ্গে এ গাজী কালুর টিলা। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এবং টিলার এলাকাগুলোতে শিক্ষার্থীদের কতটুক নিরাপত্তা দিতে পারছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা নিয়ে ওঠেছে প্রশ্ন। টিলাগুলোতে এরূপ অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

টিলারগাঁও এলাকায় বসবাসরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাজী কালুর টিলা বিকেলের পরপরই নির্জন হয়ে পড়ে। এলাকাটি এমনিতেই খুব নীরব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে আরও বেশি নীরব ছিল। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মানুষ সেদিক দিয়ে যাতায়াত করে না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াতে নির্জনতা কিছুটা কমলেও আতঙ্ক কমেনি। সেখানে যে কেউ অবাধে বিচরণ করতে পারেন। তাই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ বলেন, আমরা চাই ক্যাম্পাসে আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকুক। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই সিসি টিভি ক্যামেরাগুলো সচল এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। অনিরাপদ এবং অন্ধকারচ্ছন্ন স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা দরকার। ক্যাম্পাসের টিলাগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রশাসন তৎপর থাকলে ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কমে যাবে। সেইসঙ্গে নিজেদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

বুলবুল হত্যার পর পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যার গাজী কালুর টিলায় ঘুরতে যান বুলবুল ও তার বান্ধবী। পরে সন্ধ্যায় তাদের একা পেয়ে আবুল, কামরুল ও হাসান মোবাইল ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে রক্ত দেখে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, বুলবুল হত্যায় অন্য কোনো কারণ নেই। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এলাকাটি একটু নির্জন। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেখানে যেতে পারি না। তবে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিরাপত্তা চাইলে আমরা সেখানে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করব।

এ বিষয়ে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিলা কিংবা নির্জন এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা কর্মী, এবং সিসিটিভি লাগানো হবে। ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে লাইটিং, সিসিটিভি ক্যামেরা সচল ও নিরাপত্তা প্রহরী বাড়ানোর বিষয়ে একটা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।

এদিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনেক সংগঠন মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, বিবৃতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।