ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

যমুনায় বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ে এখনও শুরু হয়নি পাঠদান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২২
যমুনায় বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ে এখনও শুরু হয়নি পাঠদান

টাঙ্গাইল: এক বছর আগে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে চরচন্দনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পর এখনও পাঠদান শুরু হয়নি। বিদ্যালয়টি নতুন জায়গায় স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়নি।

 

অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির কারণে এখন বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু হয়নি। ফলে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। এতে শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৩৮ সালে যমুনার চরাঞ্চলে গাবাসারা ইউনিয়নে চরচন্দনী সকরারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভূঞাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিদ্যালয়টি গত বছর ১৮ জুলাই যমুনার ভাঙনে ভবনসহ জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বিদ্যালয়টি যমুনার শাখা নদীর পশ্চিম পাশে স্থানান্তরের জন্য ২৫ অক্টোবর তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠান।  
২২ নভেম্বর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ সরেজমিন পরিদর্শন কওে আরও একটি প্রতিবেদন দেন।

প্রতিবেদনে শিক্ষা কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১৫৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল। নদীর পূর্ব পাড়ের আশে পাশের এলাকায় একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।  

বিদ্যালয়টি পশ্চিম পাশে করা যেতে পারে বলে তিনি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন।  

২৩ নভেম্বর প্রতিবেদনটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠান।  

গত ৭ ডিসেম্বর চিঠির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সেকশন-২ এর সহকারী পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপা.) নাসরিন সুলতানা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম পাড়ে পুনরায় স্থাপনের জন্য জমি প্রদানে আগ্রহী জমিদাতার অঙ্গীকারনামা, জমির দাগ, খতিয়ান নম্বর ও জমির পরিমান জানতে চান।  

২৬ ডিসেম্বর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জমিদাতার অঙ্গীকার নামা, দাগ ও খতিয়ান নম্বর এবং জমির পরিমাণ উল্লেখ করে চিঠির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবগত করেন। গত ৩০ জুন বিদ্যালয়টি পুনঃস্থাপনের জন্য রেকর্ডপত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন সহকারী পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপা.) নাসরিন সুলতানা।

দীর্ঘ এক বছর ধরে বিদ্যালয়টির ক্লাস বন্ধ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক নাজমুল মোর্শেদ জানান, তারা জানতে পেরেছেন ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কেউ মাদ্রাসায়, কেউ অন্য বিদ্যালয়ে, আবার কেউ লেখাপড়া বাদ দিয়েছে। ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনও এই স্কুলের ক্লাস শুরু অপেক্ষায় রয়েছে।

ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী নৌ ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে চরচন্দনী গিয়ে দেখা যায়, আগের স্থানে স্কুলের কোন চিহ্ন নেই। শাখা নদীর পশ্চিম পাশে বিদ্যালয়ের সভাপতির উদ্যোগে একটি টিনের ঘর তোলা হয়েছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের জন্য। কিন্তু সেখানে চলছে না কোনো কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের আশেপাশেই অনেক শিক্ষার্থী সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু ক্লাস কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় তারা লেখাপড়া করতে পারছেন না।

দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া, লামিয়া ও আছিয়া জানায়, বিদ্যালয়টি নদীতে ভেঙে যাওয়ার পর তারা পড়াশোনা করতে পারছে না। তাদের আশেপাশে কোনো স্কুল নেই, তাই বাড়িতে থেকে খেলাধুলা করে দিন কাটে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম পাশে চালুর দাবি জানায় ওই শিশুরা।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম জানায়, করোনার আগে স্কুলে গেছে। করোনার প্রথম দিকে বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে বিলীন হয়েছে। করোনার পর অন্যান্য স্কুলে ক্লাস হলেও তাদের ক্লাস এখনও চালু হয়নি। আগের পড়ার সময়ে লেখাপড়া করলেও এখন পড়ার সময়ে খেলাধুলা করি আর ঘুরে বেড়ায়।

অভিভাবক সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।


অভিভাবক শফিকুল ইসলাম ও শাহজাহান মিয়া বলেন, ছেলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই তাদের বাপ-চাচার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যায়। এভাবে চলতে থাকলে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়বে।

প্রধান শিক্ষক নাজমুল মোর্শেদ জানান, বিদ্যালয়ে তিনিসহ পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে এক জন পিটিআই ট্রেনিং এর ছুটিতে আছেন। দুইজনকে অন্য স্কুলে ডেপুটেশনে দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয় কোথায় স্থাপন করা হবে সে ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল লতিফ আকন্দ জানান, বিদ্যালয় চালু না হওয়ায় নদীর পশ্চিম প্রান্তের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

বিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও উন্নত করে চালু করার দাবি জানান তিনি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৪ জুলাই বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম পাড়ে স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীর পশ্চিম পাশে নতুন করে বিদ্যালয় চালু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।