ইবি: লুঙ্গি পড়ে ক্যাম্পাসে আসায় এক ছাত্রকে শাসানোকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের মারামারিতে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাম চোখ খুলতে পারছেন না ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম খন্দকার তাসওয়ার হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (প্রথম বর্ষ) শিক্ষার্থী এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১১৫ নম্বর (গণরুম) রুমে থাকেন।
ছাত্রলীগ কর্মীদের আঘাতে বাম চোখের নিচে কেটে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ক্ষত জায়গায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। আগামী সাতদিন তাকে বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম।
এসময় তিনি বলেন, ‘বাম চোখের নিচে কেটে যাওয়ায় সেখানে সেলাই দেওয়া হয়েছে। চোখে মোটামুটি ভালো আঘাত পেয়েছেন। যার কারণে বেশ ফুলে আছে। হয়তো আগামী ৩-৪ দিন পর চোখ খুলতে পারবেন। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সপ্তাহ খানেক লেগে যাবে। ’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ শেষ করে হলের দিকে রওনা হই। হলে যাওয়ার জন্য অনুষদ ভবনের করিডর দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য অনুষদ ভবনে প্রবেশ করি। অনুষদ ভবনে প্রবেশ করা মাত্রই দেখলাম মারামারি চলতেছে। করিডর হয়ে অপর গেট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি মারামারির গোলযোগের ভেতর পড়ে যাই।
এসময় কিছু বোঝার আগেই আমার বাম চোখের নিচে ঘুষি মারে একজন। এতে আমার বাম চোখের নিচে কেটে যায়। পরে আমাকে একের পর পর কিল-ঘুষি মারতে মারতে অনুষদের দুই ব্লকের মাঝখানের করিডরে নিয়ে গেলে আমি করিডরে পড়ে যাই। পড়ে গেলেও আমাকে তারা একের পর এক লাথি মারতেই থাকে। পরবর্তীতে আমার হলের কিছু সিনিয়র ভাই আমাকে উদ্ধার করে মেডিক্যালে নিয়ে যান। সেখানে আমার চোখে সেলাই করে। আজ আবারো মেডিক্যালে গেলে ডাক্তার আমাকে আগামী সাতদিন বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন। মারধরের পর থেকে আমি এখনো চোখ খুলতে পারছি না। চোখে প্রচণ্ড ব্যথা। একের পর এক লাথির আঘাতে ঘাড়ও নড়াচড়া করতে পারছি না।
আমার সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে কারো সঙ্গে আজ পর্যন্ত কোনোদিন সামান্য কথা কাটাকাটিও হয়নি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী না। তবে হলের ছাত্রলীগের ভাইয়েরা মিছিলে ডাকলে আমি গিয়েছি।
কে কে তাকে আঘাত করেছে এমন প্রশ্ন করা হলে ভুক্তভোগী বলেন, আমি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সে হিসেবে আমার বন্ধুবান্ধব এবং হাতেগোনা কয়েকজন বড় ভাই ছাড়া তেমন কাউকে চিনি না। মারধরকারীদের আমি এতটা চিনি না। তবে সেখানে উপস্থিত পরিচিত কয়েকজনের মাধ্যমে আমি তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। আমি এর বিচার ও আমার নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী খন্দকার তাসওয়ার হোসেন তার ওপর হামলার বিবরণ ও জড়িতদের নাম উল্লেখ করে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখিত নামগুলো হলো- উন্নয়ন অধ্যাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জহিরুল ইসলাম রিংকু, ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আশিক।
এছাড়া উন্নয়ন অধ্যাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হামজা, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জামিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মিনহাজ, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আশিক কুরাইশি, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জিহাদ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
এদিকে শুক্রবারের ছাত্রলীগ কর্মীদের মারামারির পূর্বের ঘটনা (লুঙ্গি পড়ে ক্যাম্পাসে আসায় শাসানো) কেন্দ্র করে বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে জহিরুল ইসলাম রিংকু।
অভিযোগে রিংকু বলেন, ‘ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের হুজ্জাতুল্লাহ লুঙ্গি পড়ে ক্যাম্পাসে আসলে আমি তাকে নাম পরিচয় জিজ্ঞাসা করি। এসময় সে আমার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করলে তার সঙ্গে আমার তর্ক হয়। এর জেরে গত ১ সেপ্টেম্বর তারা (হুজ্জাতুল্লাহসহ ১০-১২জন) আমাকে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে লাইট বন্ধ করে লাঠি ও স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে। আমি ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘প্রথম বর্ষের সেই শিক্ষার্থীটির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে উল্লেখিতদের কাল আমি ডেকেছি। এছাড়াও ১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় আরও এক শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সবগুলো অভিযোগ আমরা ভালোভাবে খতিয়ে দেখব। এর মধ্যে অভিযুক্তদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২
আরএ