ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘পিঠা উৎসবে বন্ধুদের নিয়ে স্মৃতিচারণ-নতুনত্বের বন্দনা’ 

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
‘পিঠা উৎসবে বন্ধুদের নিয়ে স্মৃতিচারণ-নতুনত্বের বন্দনা’ 

ইবি: ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৫টা। পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়ার মুহূর্তে সূর্য তখনো মিটিমিটি হেসে মৃদু কিরণ দিয়ে যেন বুঝাতে চাচ্ছে অসাধারণ এ মুহূর্ত রেখে আমি অস্ত যেতে চাচ্ছি না! ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের পুরোনো দিনের গল্প আর নতুনত্বের বন্দনা যেন চারিপাশ হয়ে উঠেছে গ্রামীণ কোনো উৎসবের।

সবুজ ঘাসের গালিচায় গ্রামীণ পিঠার স্বাদের সঙ্গে পুরনো-নতুন গল্পগুলো হয়ে উঠছে যেন আরও প্রাণবন্ত। সে উৎসবে নেই কোনো বয়সের সীমাবদ্ধ। শিশু সন্তানদের সামনেই বাবা-মায়েরা আড্ডায় মেতে উঠছেন ৩০ বছর আগের ফেলে আসা স্মৃতিগুলোকে স্মরণ করে। পাশাপাশি পুরাতনের আদলে গড়ে ওঠা নতুনত্বের প্রাঙ্গণের বন্দনায় মেতে উঠেছেন তারা।  

অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে অনুমেয় করা যাবে না আসলে এখানে কে পঞ্চাশোর্ধ আর কে ১২ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। বরং বাবা-মায়ের ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা শিশু সন্তানগুলোও অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছেন তাদের অভিভাবকদের খুনসুটি।  

বিশ বছর থেকে পঞ্চাশোর্ধের খুনসুটির ভেতর হঠাৎ চোখ পড়লো পাঁচ বছরের শিশু রাতুলের দিকে। ভিড়ের মাঝে আনমনে পিঠা খাচ্ছে রাতুল। পাশেই বসে আছে তার মা ও বড় বোন। আশপাশের চেয়ারগুলোতে মায়ের বন্ধু-বান্ধবীরা গল্পে যেন ফিরে গেছেন ২৩ বছর আগের কোনো দিনে।  

রাতুল পিঠা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দৃষ্টি দিচ্ছে তার মা ও মায়ের সহপাঠীদের দিকে। রাতুলের মা ও মায়ের বান্ধবীরা একসঙ্গেই পড়াশোনা করতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিভাগের পুনর্মিলনীকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইবির জিমনেসিয়ামের সামনে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে বিভাগটির ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
 
উৎসবটি পিঠার হলেও সেখানে মূখ্য ছিল পুরনো বন্ধুদের কাছে পাওয়া। পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে যেন তারা মেতে উঠেছে আনন্দে। একপাশে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে মাঝবয়সী কয়েকজন। গরম গরম পিঠা খাওয়ার অপেক্ষায় ভিড় জমেছে তাদের চারপাশে। পিঠা আর চায়ের আড্ডা-খুনসুটিতে ভুলেই গিয়েছেন তাদের বয়সের সীমারেখা।  

হাজারো ব্যস্ততা ফেলে পুরোনো বন্ধুদের সান্নিধ্যে পেয়ে যেন আনন্দের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন তারা। পূর্বে রেখে যাওয়া ক্যাম্পাস আর বর্তমান ক্যাম্পাসের চিত্র তুলে ধরে মাতাচ্ছেন টেবিলের আড্ডা।
 
অনুভূতি জানাতে গিয়ে ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মইন উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের সময় ক্যাম্পাসটা উদ্বোধন হয়। মাত্র একটা একাডেমিক বিল্ডিং, সাদ্দাম হল ও জিয়াউর রহমান হল নিয়ে ক্যাম্পাস ছিল একেবারে মরুভূমির মতো। আজ ৩০ বছর পরে এসে ক্যাম্পাসে এই সবুজের সমারোহ দেখে মন খুবই উৎফুল্ল। ব্যস্ততার কারণে বন্ধুবান্ধবসহ অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় হয় না। আর সাক্ষাৎ হলেও সেটাতে অপূর্ণতা থেকে যায়। সেই অপূর্ণতাটা আজকে অনেকাংশে পূর্ণ হলো। প্রিয় মুখগুলোর সঙ্গে মন ভরে কথা বলা আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। যা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তাছাড়াও নতুনদের আথিতেয়তা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

পুরাতন ভাইবোনদের কাছে পেয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও। পরিচিতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাক্তনরা বুকে জড়িয়ে নেওয়ার পর যেন আহ্লাদে আটখানা হয়ে ওঠে তাদের মন। প্রাক্তনদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে পিঠা-চা খেতে খেতে একদম অনুরাগী হয়ে শুনছেন পেছনের গল্প, সফলতার গল্প।  

বড় ভাই-বোনদের পরশ বুলানো হাত যেন তাদের কোমল মনকে প্রাণবন্ত করে তোলে। তাইতো তাদের সেবায় একটু কমতি করছে না তারা। সাবেক ভাইবোনদের কাছে পেয়ে তারা যেন সর্বোচ্চ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। প্রাক্তনদের আতিথেয়তায় একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ছুটে বেড়ালেও যেন ক্লান্তির রেশটুকুও নেই তাদের কোমল মনে।

বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পরপরই স্যাররা আমাদের প্রথম কয়েক ব্যাচের সিনিয়রদের সম্পর্কে অনেক গল্প শুনিয়েছেন। সে গল্পগুলো আজ আমাদের চোখের সামনে ধরা দিয়েছে। সাবেক বড় ভাইয়া আপুদের ভালোবাসা আসলে আমার কল্পনাকেও হার মানায়। জীবনের অন্যতম সেরা মুহুর্ত এটি।
   
বন্ধুত্বের আড্ডা, খুনসুটি এবং সিনিয়র-জুনিয়রদের স্নেহ ভালোবাসায় মাখামাখি ছিল জিমনেসিয়ামের সামনে শুক্রবারের বিকেল। বিভাগটি প্রতিষ্ঠার পর শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হৃদ্যতার শত শত ঘটনার সাক্ষী হলো ইবির জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ। তবে এসব ঘটনা ঘটানোর সুযোগটি করে দিয়েছে বিভাগটি। পুরোনো নতুনদের মিলন ঘটাতে নিরলসভাবে কাজ করেছে বিভাগ।

আয়োজনের ব্যাপারে বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘শনিবার আমাদের মূল অনুষ্ঠান কিন্তু তার আগেই সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানায় আজকে আমাদের ইনফরমাল গ্যাদারিং। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার জিলাপি, পিঠা, পুরি, সিঙ্গারা, চা সবকিছু মিলিয়ে অনুষ্ঠান অনেক সুন্দর জমে উঠেছে। এখানে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মিলিত হয়ে অনুষ্ঠানকে অনন্য মাত্রা দিয়েছে।

বন্ধুত্বের আড্ডা খুনসুটি, পুরনো-নতুনদের স্নেহ ভালোবাসার এই সেরা সময়টি আগামীতে আবারো আসুক জিমনেসিয়াম চত্বরে। হিসাব বিজ্ঞান পরিবারের নতুন-পুরাতনদের মেলবন্ধন ছড়িয়ে যাক পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিভাগের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।