ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কেন্দ্র সচিবের কক্ষে প্যাকেট খোলা প্রশ্নপত্র!

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
কেন্দ্র সচিবের কক্ষে প্যাকেট খোলা প্রশ্নপত্র! ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে

ঢাকা: এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে স্থগিত করা হলো দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চার বিষয়ের পরীক্ষা। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের কক্ষে পরীক্ষার আগেই প্যাকেট খোলা প্রশ্নপত্র পাওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

এ ঘটনায় ভূরুঙ্গামারী থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান ও রসায়নের পরীক্ষা স্থগিত করার কথা জানানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে এই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ যথাসময়ে জানানো হবে। স্থগিত বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ের পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্র সচিবের কক্ষে প্যাকেট খোলা অবস্থায় প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের কলেজ মোড় থেকে অনুমানিক ২৫০ মিটার দূরে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের কক্ষ থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নগুলো উদ্ধার করা হয়।

ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত ও গ্রেফতার নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রসচিব ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান এবং তার অপরাপর গ্রেফতার দুই জন সহযোগী এবং পলাতক একজনসহ চার জনের বিরুদ্ধে উপজেলা পরীক্ষা কমিটির সদস্য ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আদম মালিক বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন—নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব মো. লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক এবং ভূরুঙ্গামারী বাগডাঙ্গা এলাকার মো. জুবাইর হোসেন ও কামাত আঙ্গারিয়া এলাকার মো. হামিদুল ইসলাম এবং নাগেশ্বরী থানার পূর্ব রামখানা এলাকার মো. আবু হানিফ। এর মধ্যে আবু হানিফ পলাতক আছেন।

গ্রেফতারদের কাছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ভূরুঙ্গামারী থানায় পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এর ৪/১৩ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান এবং কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করা হলে চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক সাংবাদিকদের বলেন, কুড়িগ্রামে প্রশ্নফাঁস হয়েছে। সে কারণেই পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে।

তিনি জানান, ভূরুঙ্গামারীতে যে প্রশ্নফাঁস হলো তা থানার লকার থেকে আনার সময় ফাঁস হয়েছে। মূলত সেখানকার কেন্দ্র সচিব এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি বিজ্ঞান বিভাগের বাড়তি কিছু প্রশ্ন নিয়ে নেন, যা পরে আমাদের নজরে আসে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের দাবি, প্রশ্নগুলো এখনো ছড়িয়ে পড়েনি। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নাকি কাউকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রশ্নপত্র নেওয়া হয়েছে, তা তদন্তে জানা যাবে। তবে বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সে জন্য সব ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি অধিকতর জোরালো করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-সহ পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের সাথে সমন্বয় করে পুলিশী সেবা আরও বেগবান করা হবে।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, মামলার প্রেক্ষিতে তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও দুই সহকারী শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।