ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষকের কাছ থেকে শুধু প্রত্যাশা করবো, তা পূরণ করবো না তা হয় না

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২২
শিক্ষকের কাছ থেকে শুধু প্রত্যাশা করবো, তা পূরণ করবো না তা হয় না অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণে সরকার আন্তরিক বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, শিক্ষকের কাছ থেকে শুধু প্রত্যাশা করবো, প্রত্যাশা পূরণ করবো না তা হয় না।

বিশ্ব ‘শিক্ষক দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।  

এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।  

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আমরা সবাই বিশ্বাস করি শিক্ষকের কাছ থেকে শুধু প্রত্যাশা করবো, শিক্ষকের প্রত্যাশা পূরণ করবো না তাহলে হয় না। শিক্ষকের প্রত্যাশা পূরণেও আমরা আন্তরিক। আমাদের যে সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। শিক্ষকের আর্থিক, সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা ভালো কিছু চাইলে ভালো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন জরুরি তার চেয়ে বেশি জরুরি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। সেই পরিবেশ শুধু ইট-কাঁঠ-বালুর অবকাঠামো দিয়ে হয় না, সেই পরিবেশ শুধুমাত্র প্রযুক্তি দিয়ে হবে না। আমার শিক্ষকের মনে যদি প্রশান্তি থাকে, আমার শিক্ষকের মনে যদি উৎসাহ থাকে তাহলে শিক্ষার পরিবেশ সত্যিই যথার্থ হয়ে উঠবে। কাজেই আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে চাই। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি।  

একটি সুন্দর সমাজ ও জাতি গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সারা জীবনের জন্য যিনি আমাদের গঠন করে দেন তিনি আমাদের শিক্ষক। আমাদের মানুষ হতে শেখায়, দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেন, আমাদের পুরো মনটাকে তৈরি করে দেন, আমাদের মধ্যে স্বপ্ন জাগিয়ে দেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যান। আমাদের পুরো জীবনটাতে তাদের অনন্য সাধারণ ভূমিকা রয়েছে।  

তিনি বলেন, আমি নিজে একজন শিক্ষকের সন্তান এবং সেই হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত। আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কাজ করছি, অনেক কথা বলছি। শেষ মেষ শিক্ষকের কাছেই যেতে হবে। তিনি যদি ঠিক থাকেন তাহলে সত্যিকার অর্থে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে মান আমরা চাই তা পেতে পারবো।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকের সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা এগুলো ভীষণ জরুরি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আপদগুলো দূর করার চেষ্টা করেছি। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ফাঁস- সেটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তারপরও দুই-একটি জায়গায় চেষ্টা হয় কিন্তু ব্যত্যয় ঘটে সেখানে কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত থাকেন, তার দায় কিন্তু সবাইকে নিতে হয়। সেজন্য আমাদের সবাইকে খুব সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার সময় আমরা চাই একদম নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা হবে।

 তিনি বলেন, আমার শিক্ষার্থী কত নম্বর পেল শুধু সেই নম্বর দিয়ে যেন তার মান বিচার করতে না যাই। শুধু নম্বর পাওয়াই যথেষ্ট নয় কিংবা শুধু নম্বর পাওয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সে আসলে কতটা শিখলো, সে কতটা মানুষ হলো, সে কতটা মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হলো সেটি বিবেচ্য বিষয়। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম তেমনভাবে তৈরি করেছি। আজকে সারা দেশের সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের মধ্যে নিয়ে আসার কার্যক্রম আমরা শুরু করতে যাচ্ছি, এ বছরের শেষ নাগাদ প্রশিক্ষণগুলো শেষ করবো। এ পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষককে সাইক্লোজিক্যাল পারস্কেটিভে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দু’জন করে কাউন্সিলিংয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন।  

শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের শুধু শারীরিক সুস্থতাই যথেষ্ট নয়; মানসিক অসুস্থতায় সে যদি বাড়িতে হোক, পথে হোক, বন্ধ-বান্ধবের মধ্যে হোক, পড়াশোনায় হোক; যেকোনো ক্ষেত্রে যেকোনো পরিসরে যদি তার সংকট বা দুচিন্তা থাকে যা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে তেমন যেকোনো সংকট মোকাবিলায় সে যেন তার শিক্ষককে পাশে পায়। কখনও কখনও শিক্ষার্থী প্রত্যাশার ভার বহন করতে না পেরে চরম পথ বেছে নেয়, আত্মহননের পথও কেউ কেউ বেছে নেয়। আমরা চাই না, একজন শিক্ষার্থীও যেন রকমের পরিস্থিতির শিকার না হয়। সেই ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিক্ষকেরও দায়িত্ব আছে তারা যেন বুঝতে পারে কোন শিক্ষার্থী সংকটের মধ্যে আছেন। সেজন্য একেবারে মায়ের মমতা নিয়ে এবং শিক্ষকের মমতা নিয়ে প্রতিটি শিক্ষককে তার শিক্ষার্থীকে দেখতে হবে।  

দীপু মনি বলেন, শিক্ষায় এখন আর পরিবর্তন বা সংস্কার দিয়ে চলবে না। সেই রূপান্তর ঘটাতে আমাদের সবাইকে অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে, আরও অনেক বেশি দক্ষতা নিয়ে কাজটি করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২২
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।