ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিসিসি নির্বাচন: ভোটের ও মাঠের হিসেব-নিকেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩
বিসিসি নির্বাচন: ভোটের ও মাঠের হিসেব-নিকেশ

বরিশাল: আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দল। সেই হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তঃকোন্দল যাই থাকুক না কেন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে ভোটের হিসেব কষতে হবে প্রার্থীদের।

যদিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, সেক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতির হার অনেকটাই কমার শঙ্কা রয়েছে। আর সুশীল সমাজের নাগরিকরা বলছেন, প্রার্থীরা যদি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারেন তাহলে নির্বাচনটাই অর্থহীন হয়ে যাবে।

বরিশাল নগরের বাসিন্দা সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক আনিসুর রহমান খান স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, ভোটার উপস্থিত না করতে পারলে নির্বাচন করা না করা একই কথা হবে। আর বরিশাল শহরের ইতিহাস খতিয়ে যদি দেখা যায়, তাহলে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত হলে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকবে। এককথায় ভোট বাড়লে বিএনপি মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগের না জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকে এখানে, যেটা ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনের সময়েও আমরা দেখেছি। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপি কোনো জায়গাতেই প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কিছুটা সুবিধাও থাকছে।

বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাদের ভোটাররা কেন্দ্রে না যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি জানিয়ে আনিসুর রহমান খান বলেন, যদি কিছু ভোটার ভোটকেন্দ্রে যায় তারা খুঁজবে তাদের সমর্থিত বিকল্প বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে। এক্ষেত্রে সাধারণ ভোটারদের ওপর জোর দিতে হবে বিভিন্ন দলের ঘোষিত সকল প্রার্থীকে। সেটা হোক মেয়র কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থী। যদিও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।

এদিকে কিছুটা সামনে আসা মনোনীত প্রার্থীর সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিভেদটা ভবিষ্যতে আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বন্দ্ব সব সময় সবার জন্য ক্ষতিকর হবে, যার প্রভাব শুধু ভোটে নয় সব জায়গাতেই পড়বে। আবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী স্থানীয় ভোটারদের মাঝে অনেকটাই অপরিচিত। যদিও আগেই জনসংযোগের কাজ শুরু করেছেন তিনি, যেটা ভালো দিক। এছাড়া আওয়ামী লীগ এখানে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরে যেতে পারেনি, সাধারণ ভোটাররাও দেখছে, একই পরিবারের অর্থাৎ ভাতিজার বদলে চাচাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবারের বাহিরে গেলে আওয়ামীলীগের অবস্থান আর একটু বেটার হতো।

তবে নির্বাচনে বিএনপির না থাকা এবং ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে লড়াইটা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন সাংবাদিক ও লেখক আনিসুর রহমান খান। তিনি বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিজেদের একটা অবস্থান করে নিচ্ছে। আর বরিশাল শহরে জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংক রয়েছে নিঃসন্দেহে, তাদের প্রার্থীও ভোটারদের কাছে বেশ পরিচিত। সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে ভোটযুদ্ধ হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে ভোটার উপস্থিতির ওপর।

আর সেটা নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যাই হোক না কেন ভোটাররাই প্রার্থী নির্বাচন করবেন। সেক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে বরিশাল শহরের বাসিন্দাদের উন্নয়নের একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ চাওয়াটা বাস্তবসম্মত বলে মত দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও নির্বাচন বিশ্লেষক মো. সোহেল রানা।

তিনি বলেন, জনসাধারণের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক স্বচ্ছতার ওপর নির্মিত হলে উন্নয়ন গতিশীল হয়, সে উন্নয়ন অবকাঠামোগত কিংবা ব্যবস্থাপনাগতও হতে পারে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহসাই চোখে পড়ে। তবে, ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন হয় দীর্ঘমেয়াদী।

সোহেল রানা আরও বলেন, রাজনীতির মাঠে নানা হিসেব-নিকেশ থাকলেও যে ভোটগুলো ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে তারা ইতিবাচক পরিবর্তনকে ইনডেক্স বা আদর্শ হিসেবে নেয়। আমার মনে হয়, বিসিসির জনগণ এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের নিকট উন্নয়নের একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ চাইছে।

তিনি যোগ করেন, তরুণ ভোটাররাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির ব্যবহার আজকের তরুণদের রাজনীতি-সচেতন হতে বিপুলভাবে সহায়তা করেছে। তারা প্রকৃত অর্থেই যা ভালো তার পক্ষে অ্যাডভোকেসি করছে। উন্নয়ন, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতিশ্রুতি যিনি দিতে পারবেন তরুণরা তার পক্ষেই থাকবে বলে আমার ধারণা।

এবার বরিশাল সিটি নির্বাচেন মোট ভোটার পৌনে ৩ লাখ। এর মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার এবং নারী ও পুরুষের ভোটারের সংখ্যাও প্রায় সমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।