ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিসিসি নির্বাচন: ভোটের মাঠে সরব ২ মেয়রপ্রার্থীর ২ ‘পত্নী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
বিসিসি নির্বাচন: ভোটের মাঠে সরব ২ মেয়রপ্রার্থীর ২ ‘পত্নী’

বরিশাল: প্রতীক বরাদ্দ না হলেও ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাঠ ততই জমজমাট হয়ে উঠছে।  কৌশলী প্রচারণার বর্তমান মাঠে মেয়র প্রার্থীর নানানভাবে ভোটরদের কাছে গিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।

শুধু যে প্রার্থী এমনটা নয়, তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনরাও মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেদের কথা তুলে ধরছেন।

যদিও এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) এর সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের সহধর্মিণী স্ত্রী ইসমত আরা ইকবাল ছাড়া নির্বাচনী মাঠে আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।  তবে এ দুজনের টার্গেট যে, সংখ্যায় সমতায় থাকা নারী ভোটার তা নিশ্চিত করে বলাই যাচ্ছে। যদিও সুযোগ বুঝে বিপরীত লিঙ্গের কাছেও নিজেদের পক্ষে ভোট চাইতে ভুলছেন না তারা।

ভোটের মাঠের সূত্র বলছে, অধিপতি খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর টানা একমাস ধরে নির্বাচনী মাঠে কৌশলী প্রচারণার চালাচ্ছেন লুনা আব্দুল্লাহ। মতবিনিময় সভা আর কুশল বিনিময়ের কৌশলে ভোটারদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি নিজের অধিপতির পক্ষে ভোটও চাইছেন।

এদিকে অসুস্থতা কাটিয়ে মাত্র দুই দিনের প্রচারণায় ইসমত আরা ইকবালও নিজের অধিপতির পক্ষে ভোট চাইতে কুন্ঠিত বোধ করছেন না। তবে উভয় মেয়রপ্রার্থীর এই দুই সহধর্মিণীর মধ্যে সময়ের ব্যবধানে প্রচারণার মাঠে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন লুনা আব্দুল্লাহ। সেক্ষেত্রে সমতা আনতে হলে ইসমত আরা ইকবালকে প্রচারণার পরিধি বাড়াতে হবে।

নির্বাচনী প্রচারণার কাজে লুনা আব্দুল্লাহর সঙ্গে থাকা নারী কর্মীরা বলছেন, খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এক মুহূর্ত ঘরে বসেছিলেন না লুনা আব্দুল্লাহ। সকাল-বিকেল ছুটে বেড়াচ্ছেন এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায়, কলোনিগুলোতে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি যেখানে যান সেখানে নারীদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে কখনও বৃদ্ধা, কখনও তরুণী যে কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন, কুশলবিনিময় করছেন। আবার চলতে চলেত ক্লান্ত হয়ে গেলে যে কারো ঘরে খানিকটা সময়ের জন্য বসে পড়ছেন। আর এরমাঝেই তিনি নারীদের উন্নয়নের কথা বলছেন, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে নগর উন্নয়নের কথাও বলছেন।

আর লুনা আব্দুল্লাহ বলছেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের নিয়ে সবসময় ভাবেন। তার হাত ধরেই আজ দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, তার স্বপ্ন নারীরা আরও এগিয়ে যাক। আর জননেত্রী শেখ হাসিনাই তো কৃষকনেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে খোকন সেরনিয়াবাতকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন, তাহলে আমরা কেন নারী-শিশু ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে চিন্তা করবোনা।  খোকন সেরনিয়াবাতও বৈষম্যহীনভাবে শিশু, নারী-পুরুষ এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়েই এগিয়ে যেতে চান।

তিনি বলেন, নারীরা যাতে অবহেলিত না থাকে সে চেষ্টা আমাদের থাকবে, আর সে লক্ষেই নারীদের কথা শুনতে আমি তাদের কাছে যাচ্ছি, তাদের উৎসাহ দিচ্ছি। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর সহধর্মিণী হিসেবে আগেও আমি তার পাশে ছিলাম, এখনও একসঙ্গে কাজ করছি, সামনেও করবো।

এদিকে নির্বাচনী মাঠে সহধর্মিণীর অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, দীর্ঘ বছর আমার মা আমার কাছে ছিলেন, তিনি কাউকে কখনও কষ্ট দিয়ে কথা বলেননি।  আর মায়ের সেবাযত্ন সবসময় করেছেন আমার স্ত্রী, যিনিও একজন নারী। তাকে কখনও দেখিনি মায়ের সেবা করতে গিয়ে ভিন্ন মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আর এখন তিনি আমার পক্ষে হয়ে কাজ করবেন এটাও স্বাভাবিক কারন, তিনি (লুনা আব্দুল্লাহ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর বিপদে-আপদে সবসময় আমার পাশে ছিলেন।

অপরদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আমার সহধর্মিণী ইসমত আরা ইকবাল শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকায়, চিকিৎসা শেষে তিনি দুইদিন ধরে বরিশাল নগরে গণসংযোগ বা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তার কাছে সহজেই নারীরা নিজেদের কথা তুলে ধরছেন, হয়তো আমার এগুলো অজানাই থাকত। ভবিষ্যত বরিশালের উন্নয়নে একে অপরের পাশে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ইকবাল-ইসমত দম্পতি।

এদিকে মেয়র প্রার্থীদ্বয়ের সহধর্মিণীদের নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ানোর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নারী ভোটাররাও।  

নগরের রসুলাপুর এলাকার বাসিন্দা ও ভোটার শাহনাজ বলেন, শওকত হোসেন হিরণ ভাইর সোময় দেখছি মেয়র প্রার্থীর বউরে নির্বাচনের মাঠে স্বামীর লইগ্যা ভোট চাইতে আইতে। তয় হেই সময় জেবুন্নেছা একলা নারী যে মেয়র প্রার্থীর বউ হইয়া মোগো কাছে আইছে, এরপর সাদেক মেয়ার বউ মোগো ধারে না আইলেও হুনছি হেও নাকি নামছিল স্বামীর লইগ্যা ভোট চাইতে। আর এবার তো হ্যার (সাদিক আব্দুল্লাহর) চাচার বউ লুনা আফায় মোগো ধারে ভোট চাইতে আইলো, হুনছি জাতীয় পার্টির তাপস ভাইর বউও নাহি আইবো।

তিনি বলেন, বউরা তো বেডি মানুষ হ্যাগো লগে পরান খুইল্যা দুইডা কতা কওয়া যায়, বেডাগো ঠেইল্যা গিয়া কি আর প্রার্থীরে অত কতা কওয়া যায়। তয় মোরা যারে দিয়া বুঝমু মোগো উন্নতি হইবে হ্যারেই ভোট দিমু।

তবে নির্বাচনে নারী ভোটার বরিশালে বড় ফ্যাক্ট বলে দাবি করে নগরের আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা ও চাকরীজীবী নারী লিপি আক্তার বলেন, যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে বুঝতে পারছেন, তারাই কৌশলে হোক আর যেভাবে হোক নিজেদের সমর্থন যোগাতে ভোটারদের কাছে ছুটছেন। তবে নারী ভোটারদের টার্গেট করে নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন প্রার্থীদের সহধর্মিণীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।