ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিসিসি নির্বাচন: প্রচারণায় ফুরফুরে মেজাজে জাপা প্রার্থী 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
বিসিসি নির্বাচন: প্রচারণায় ফুরফুরে মেজাজে জাপা প্রার্থী 

বরিশাল: আর মাত্র ১২ দিন পর বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রার্থীরা জোরেসোরে প্রচার-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

কাউন্সিলরদের পাশাপাশি মেয়র প্রার্থীরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন।

প্রচার-প্রচারণার মাঠে চষে বেড়িয়ে এরিয়ে মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরিনয়াবাত), লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। এর বাইরে গোলাপফুল প্রতীকের মিজানুর রহমান বাচ্চু, টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান রুপন, হাতি প্রতীকের আসাদুজ্জামানও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তবে হরিণ প্রতীকের আলী হোসেন হাওলাদারের প্রচারণার খবর এখনও তেমনভাবে শোনা যায়নি ভোটারদের কাছ থেকে।

টানা কয়েকদিনের প্রচারণা শেষে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরিনয়াবাত) এর সাথে তারাও এখন বিজয়ী হলে নগর উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখবেন সেগুলো ভোটারদের কাছে মৌখিকভাবে তুলে ধরছেন।

যদিও সকল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরাই দাবি করছেন মাঠে এগিয়ে রয়েছেন তারাই। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিছুটা এগিয়ে দিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীকে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাদের অভ্যন্তরে কোনো বিরোধ নেই বলে স্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন, আর জাতীয় পার্টির তাপস বলছেন যারা বিরোধিতা করছেন, তারা তো একটি ওয়ার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন, যেখানে তার সাথে স্থানীয় সকল নেতাকর্মী এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রয়েছেন।

ভোটাররা বলছেন, বরিশাল নগরে সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের। এছাড়া কিছু ভোট রয়েছে জাতীয় পার্টির আর কিছু ভোট রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের।

পরিবারের ছেলে কামরুল আহসান রুপনও এ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও বিএনপির ভোট ব্যাংক ঝুঁকবে কার দিকে এখন সেটাই প্রশ্ন সবার। তবে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে রুপনের অবদান নেই বলে শ্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাই তার পক্ষে বিএনপির ভোট ব্যাংকে হাত দেয়াটাও কঠিন হবে।

এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনের মাঠে নেমে প্রচারণার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এমনটাই বলছেন তার অনুসারীরা।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমর্থক শামীম বলেন, এবারের নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ব্যতিত, স্বতন্ত্র ও দলীয় ৬ প্রার্থীই প্রথমবার মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বরিশালের পুরাতন মানুষ। তবে জনপ্রিয়তায় তাপস ভাই এগিয়ে। কারণ, তাপস ভাই গত ৫ বছরে এ নগরবাসীর পাশে সুখে-দুঃখে ছিলেন, আর এ কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের থেকে কম বড় হচ্ছে না, তাপস ভাইয়ের উঠান বৈঠকগুলো। আমার নিশ্চিত তিনি এগিয়ে রয়েছেন অন্যসব প্রার্থীর থেকে।

নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আদনান বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বরিশালের উন্নয়ন চান বলেই মেয়র পরিবর্তনে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি ব্যবসায়ী ও ভদ্র মানুষ, অর্থ-বিত্তেও কমতি নেই, তাই বরিশালের উন্নয়ন ঘটাতে হলে খোকন সেরনিয়াবাত ছাড়া বিকল্প কিছু নাই, এটা সাধারণ মানুষও বুঝে গেছে। ১০ বছর ধরে থমকে থাকা বরিশালের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে, নতুন হলেও খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষেই সাধারণ মানুষের সমর্থনের জোয়ার দেখা গেছে। পথাসভা ও উঠান বৈঠকে এর চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে।

এদিকে নির্লোভ, ভালো ও সৎ মানুষ বিধায় হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের পক্ষে নগরবাসী থাকবে বলে জানিয়েছেন সমর্থক সজীব হাওলাদার।

যদিও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলছেন, ২০১৮ এর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চাই না আমরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করেছে, তবে যাকে দিয়েছে সেও একই পরিবারের সদস্য। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা থাকে। তবে মনে রাখতে হবে বয়স্ক মানুষের সাথে যুবকরা দৌড়ে হেরে গেলে মানুষ সেটা ভালোভাবে নেবে না।

তিনি বলেন, আমি গত নির্বাচনের পর বরিশাল ছেড়ে যাইনি, এখানকার মানুষের সাথেই ছিলাম। ফর এভার লিভিং সোসাইটির মাধ্যমে চেষ্টা করেছি মানুষকে স্বাবলম্বী করার।

যেখান থেকে নিজের একটা অবস্থানও হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি এদেশে ক্ষমতায় ছিল, তাই এটা কোনো ছোট দল নয়। আমাকে দল এবারে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। আর এখানে দলের মধ্যে এবং আমার সাথে কারও কোনো বিরোধ নেই। সেই হিসেবে দলের ভোট, নিজের গোছানো ভোট পাব। এছাড়া বৃহৎ দল হয়ে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও তাদের সমর্থকরা তো ভোট দেবেন। তবে তারা নৌকায় ভোট দেবেন না এটা নিশ্চিত, সেক্ষেত্রে সেখান থেকে জাতীয় পার্টির বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর গত ৪ বছরে আওয়ামী লীগের মেয়র এখানে কিছু করতে পারেনি, তাই এবারে সাধারণ মানুষের মাঝে তাদের ওপর অনীহা রয়েছে ভোটারদের।

যদিও এ কথা মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি বলেন, তার আগমনে বরিশালের মানুষদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাকে মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন এবং সাধারণ মানুষই তাকে বিজয়ী করার কথা বলছেন।

এদিকে ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশের প্রার্থীর বিষয়ে জাতীয় পার্টির তাপস বলেন, মাহফিলে হাজার-হাজার, লাখ-লাখ লোক হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু তারা যে এজন্য ভোট দেবে সেটা চিন্তা করা ঠিক নয়।

যদিও অন্য প্রার্থীর বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তবে তিনি সুষ্ঠু ভোট হলে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।