ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিসিসি নির্বাচন: সমীকরণে নৌকাকে নাগালে পাচ্ছে না কেউ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
বিসিসি নির্বাচন: সমীকরণে নৌকাকে নাগালে পাচ্ছে না কেউ 

বরিশাল: আর মাত্র একদিন পরেই ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সেই হিসাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা হাতে আছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার জন্য।

এরইমধ্যে ভোটের মাঠের হিসাবে নিকেষ অনেকটাই বদলে গেছে।

ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমীকরণ যে ধরনেরই হোক না কেন, নগরজুড়ে মেয়রপ্রার্থীদের হিসাবটা ভিন্ন ধরনের। যদিও বিগত দিনে ভোটের হিসাবের পরিসংখ্যান বলছে বরিশাল নগরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুটি বৃহৎ ভোট ব্যাংক রয়েছে। এর ধারে কাছেও নেই এবারে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হিসাবটা এখানে শুরু থেকেই গোমড়ামুখী।  

বিএনপি এই সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটে বেশ অনাগ্রহী। আর যদি সেই হিসাবে কষে এগোতে হয়, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্য কোনো দলের নাগালে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যদিও বিএনপির সমর্থকরা ভোট দেন, তাহলে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ভাগ বসানোটাকেই সমীচীন বলে মনে করছেন অনেকে।

হিসাব বলছে, গত চারটি সিটি নির্বাচনের মধ্য ২০১৮ সালের ফলাফলের হিসাবটা স্থানীয় ভোটের মাঠের সমীকরণের হিসাবের বাইরে ছিল। ওই নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির প্রভাবশালী ও হেভিওয়েট প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন।

২০১৮ সালের নির্বাচন বাদ দিয়ে, শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০০৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এনায়েত পীরকে ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন মজিবুর রহমান সরোয়ার। এ নির্বাচনে বিএনপির আরও দুই প্রার্থী অংশ নেওয়ায় তাদের সম্মিলিত ভোটের হিসাবে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল অর্ধেকেরও কম ভোট। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণ ৫৮৪ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। যেখানে বিএনপি নেতা সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ছিলেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এ নির্বাচনেও বিএনপির আরও দুই প্রার্থী মিলিয়ে পরাজিত প্রার্থীর সমান সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন, আর তিন প্রার্থী মিলে হিরণের দ্বিগুণ ভোট পেয়েছিলেন।  যদিও ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির একক প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের হিরণ। এ চার সিটি নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ঘরের বাইরে থাকা কোনো প্রার্থী ভোটের হিসাবে তেমন আলোচনায় আসেনি।  

গত চারটি সিটি নির্বাচনই পর্যবেক্ষণ করা বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক আনিছুর রহমান খান স্বপন বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে গত চারবারে দুইবার বিএনপি এবং দুইবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র হন। শওকত হোসেন হিরণের পর এবার আওয়ামী লীগ একজন কালিমাবিহীন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এটাই নৌকার জন্য প্রথম প্লাস পয়েন্ট। আবার আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি মাঠে নেই। আর বিএনপি ঘোষণা অনুযায়ী নেতাকর্মী ও অনুসারীরা যদি ভোটের মাঠে না আসে তাহলে নিজস্ব ভোট ব্যাংকেই সবার থেকে এগিয়ে থাকবে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, যদি বিএনপির সমর্থকরা ভোটের হিসাবের মাঝে এসেই পড়েন, তাহলে সেখানে বিএনপি পরিবারের সদস্য, যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন তার ভাগ্যের কিছুটা পরিবর্তন ঘটবে। সে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ায় এবং স্থানীয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভক্তিতে পুরো সমর্থনটা পাবে না। সেক্ষেত্রে বিএনপি পরিবারের সন্তান স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান রুপনের পাশাপাশি বিএনপির সমর্থকদের ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ভাগ বসাবে। এ হিসাবেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন। এরপরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে কাছাকাছি থাকতে পারে ক্ষমতাসীনদের বি টিম হিসেবে পরিচিত লাঙ্গলের তাপস কিংবা হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল। মূল শহরে লাঙ্গলের অবস্থান ভালো হওয়ায় তার অবস্থান আওয়ামী লীগের পরেই থাকতে পারে।

দেশের ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দেশ স্বাধীনের পর বরিশালের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো দেখেছেন এমন একজন বরিশালের বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক (অবসরপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক নগরের বাসিন্দা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নজরুল হক নীলু।  

তিনি বলেন, বিএনপির ভোট বয়কটের একটা রাজনীতি বা ফলাফল আছে। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হলে, মনে করতে পারি বিএনপির ভোটাররা যায়নি কেন্দ্রে, সেই কারণে উপস্থিতি কম। আর ভোটার উপস্থিতি কম হলে বিএনপির ভোটে না গিয়েও বিজয় আছে। সেক্ষেত্রে তারা তাদের স্বীকৃত নেতাদের ওপর চাপ রাখবে।

তাদের যারা সমর্থক অর্থাৎ কোনো পদ-পদবী কিংবা দলে সক্রিয়তা নেই। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীক দেখলে ভোট দেবো এ ধরনের ভোটারদের কিছু অংশ যাবে ভোট দিতে। এর মধ্যে কিছু লোক রুপনকে ভোট দিতে পারে। আবার যারা নৌকায় একেবারেই ভোট দিতে চাইবে না, তারা হাতপাখা বা লাঙ্গলে দেবে। এই ভোটারদের কিছু অংশ নিজেদের পক্ষে কাষ্ট করানোর চেষ্টা আওয়ামী লীগেরও আছে। এই ভাগাভাগিতে কে বৃহৎ অংশ পাবেন সেটাই বিষয়।

শওকত হোসেন হিরণ আওয়ামী লীগে যাওয়ার সময় জাতীয় পার্টির ভোটারদের নিয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাঙ্গলের তাপস ভালো ছেলে। কিন্তু তার টাকা ও সাংগঠনিক অবস্থা সেই ধরনের নেই। আর হাতপাখাকে সিলেকটিভ সেকশন ভোট দেবে, এর বাইরে কারও বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না।  

বিএনপির সান্টুর মতো পয়সাওয়ালা ও প্রভাবশালী প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ এখানে হতে পারতো না জানিয়ে তিনি বলেন, অপপ্রচার চালিয়ে কোনো প্রার্থী তেমন একটা ভোট বাগাতে পারবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রথম পজিটিভ বিষয় হলো, তার রাজনীতির দিক থেকেও কোনো স্পট নাই, আর ক্ষমতা থাকাকালীন কর্মকাণ্ডও নেই। সেই জায়গা থেকে তিনি স্বচ্ছ রয়েছেন।  এই যে কালিমা যুক্ত হয়নি, সেটাই তার প্রথম প্লাস পয়েন্ট। এছাড়া সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র থাকতে রাস্তাঘাটের কাজ হলেও এখানে যে পরিস্থিতিটা সৃষ্টি হয়েছে, খোকন সেরনিয়াবাত থাকলে সেটা হবে না এ বিষয়টা সাধারণ মানুষও মনে করছে। এটাও একটি বিষয় নৌকার এগিয়ে থাকার জন্য।

যদি আওয়ামী লীগকে কিংবা নৌকা ভোট না দেয়, তাহলে প্রার্থীর বিজয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। এজন্য আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যদিও প্রচারণার শেষ দিকে এসে আমরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জোরালোভাবে মাঠে ভোট চাইতে দেখেছি, আবার ১৪ দলও মাঠে রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু ভোট রয়েছে, যে ভোট নৌকার পক্ষেই পড়বে। এ সুযোগটা অন্য দলের প্রার্থীদের নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।