ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ ও স্বামী-স্ত্রীর নাম জালিয়াতি রোধে ব্যবস্থা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে এসব দলিলাদিতে কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড বসানোর পক্ষে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনআইডি পাওয়ার জন্য অনেকেই ভুয়া জন্মসনদ জমা দেয়। এতে সংশ্লিষ্টরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে করেন একাধিক জন্ম নিবন্ধন। আবার নাগরিক সনদপত্রও ভুয়া পাওয়া যায়। এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর নাম নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে যাদের একাধিক বিয়ে থাকে কিংবা ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাদের এনআইডি সংশোধনের সময় এ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। এতে সেবা দিতেও যেমন বিলম্ব হয়, তেমনি কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকেও বঞ্চিত হন অনেকে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা বিষয়গুলো উত্থাপন করেন। তারা বলেন, একজন ব্যক্তির একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা প্রদানে অসুবিধা হয়। জন প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ বা পরিচয়পত্র বা ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদিতে কিউআর কোড সম্বলিত না হওয়ায় এগুলোর সঠিকতা যাচাই করা যাচ্ছে না। আবার নিকাহনামা বা তালাকনামার সঠিকতা যাচাইয়ের অনলাইন ব্যবস্থা থাকা দরকার। অনলাইনে পাসপোর্টের তথ্যও যাচাইকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এসব প্রমাণপত্রসমূহ অনলাইনে যাচাই করা সম্ভব হলে এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত সেবা প্রদান সহজ হবে। আলোচনার পর যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। এরপর ইসি সচিব শফিউল আজিম এনআইডি মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত নির্দেশনা দেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে বলেন।
নির্দেশনায় ইসি সচিব বলেন, একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকা রোধকরণ, কিউআর কোড সম্বলিত নাগরিকত্ব সনদ প্রাপ্তি, নিকাহনামা বা তালাকনামার সঠিকতা অনলাইনে যাচাইযোগ্য করা এবং অনলাইনে পাসপোর্টের তথ্য যাচাইকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের পত্র প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এসব ছাড়াও তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদনের ক্যাটাগরি (জটিলতার ধরণ) নির্ধারিত হওয়ার পর আবেদনকারী পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কোন কার্যালয়ে যোগাযোগ করবেন তা মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানাতে বলেন।
অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবাসহ সকল ধরনের সেবা প্রদানের বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম গ্রহণ, মাঠ কার্যালয়ে সংরক্ষিত অবিতরণকৃত স্মার্টকার্ড দ্রুত বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ,প্রত্যেক কার্যালয়ে সেবা গ্রহীতাদের বসার ব্যবস্থাকরণ এবং সেবাগ্রহীতার সেবা প্রদান সহজ ও হয়রানি মুক্ত করতে প্রতি কার্যালয়ে টিম গঠন করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অবগত করার নির্দেশ দেন ইসি সচিব।
জানা গেছে, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে দশটি নির্বাচনি অঞ্চলে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৫১৬টি এনআইডি আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার ২৯৪টি আবেদন। আর তথ্য কিংবা দলিলাদি জটিলতা সংক্রান্ত আবেদন ঝুলে আছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ২২২টি, এদের মধ্যে অনেকের আবেদনে জন্ম নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ এবং নিকাহনামা বা তালাকনামা সংক্রান্ত দলিলাদির সমস্যা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, দুর্নীতির উৎসটা বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতির উৎস বন্ধ করার মানে হচ্ছে, আমার যে ইয়াং অফিসার আছে উপজেলায় ওরা যদি ভালো কাজ আদায় করতে পারে, সবাই তো আর খারাপ না। ১০ আঞ্চলিক কর্মকর্তার মধ্যে যদি দুইজন ভালো না হয়, তাহলে তো তিনি নিজেই নিজের প্যাঁচে পড়বেন। উপজেলায় কেউ পিছিয়ে থাকলে তিনিও চাপের মধ্যে থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, আবার অন্যরকমও আছে। প্রতারণা আশ্রয় নিয়েও অনেকে এনআইডি করতে চায়। সঠিক দলিল না দিলে তো হবে না। আমরা সব বিষয় নিয়েই কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২৪
ইইউডি/এসএএইচ