অপরদিকে সাতদিনের মধ্যেই নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি নিবন্ধিত দলই এবার অংশ নেয়।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে জয়ী, বিজয়ী সব প্রার্থী ও দলকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। অন্যথায় আইনে নির্ধারিত শাস্তি অনুযায়ী জেল-জরিমানা হতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যে দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারে। সর্বোচ্চ ১০০ প্রার্থীর জন্য দেড় কোটি টাকা করা যায়। সর্বোচ্চ ২০০ প্রার্থীর জন্য তিন কোটি টাকা এবং ২শ’র বেশি প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দল সর্বোচ্চ সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয়বাদী দল বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়সীমা ছিল। কেননা, এই তিনটি দলের প্রার্থী রয়েছে দুইশ’র অধিক। আর জাতীয় পার্টির ব্যয়সীমা ছিল তিন কোটি টাকা। কেননা, দলটির প্রার্থী রয়েছে ১শ’র বেশি।
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৫৮ জন, বিএনপির ২৪২ জন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৯৯ জন প্রার্থী ছিল। আর জাতীয় পার্টি ১৭৪ আসনে প্রার্থী দেয়।
দলগুলো চাঁদা ও অনুদান থেকে আয় করতে পারে। তবে নির্বাচনে ব্যয় করতে হয় নির্ধারিত খাতে। এক্ষেত্রে পার্টি প্রধানের ভ্রমণ, পোস্টার, প্রচারকাজের জন্য ব্যয় করতে হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৪ সিসিসি-বিধি অনুযায়ী, ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটা অমান্য করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর জন্য ভোটারপ্রতি গড় ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ১০ টাকা। তবে কোনো আসনের ভোটার সংখ্যার আধিক্যের কারণে মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে দিতে হয়। কোনো প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময়ে মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে।
২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যথাসময়ে ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইসি। সে সময় ভোটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ টাকা। যদিও সেবারও সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল ২৫ লাখ টাকা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ভোটার সংখ্যা ছিল ঢাকা-১৯ আসনে। এখানে মোট ভোটার ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩০১ জন। সবচেয়ে কম ভোটার ছিল ঝালকাঠী-১ আসনে। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৫ জন।
ভোটার সংখ্যা যেমনই হোক না কেন, প্রার্থীর ব্যয় ২৫ লাখ টাকার বেশি হবে না। প্রার্থী এই ব্যয় করবেন তার এজেন্টের মাধ্যমে।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীর ভোটারপ্রতি গড় ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা।
নির্বাচন কমিশনের মুদ্রণ শাখার কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের কাজ চলছে। সবগুলো আসনের গেজেট একই দিন প্রকাশের লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় সেখানে পুনর্ভোটের পর ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। আর গাইবান্ধা-৩ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে পুনর্তফসিল অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
ইইউডি/এএ