সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটির দিন হওয়ায় শুক্র ও শনিবারকেই মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছিলো অসাধুরা। কারণ ওই সময়ে কোনো নজরদারি নেই।
সম্প্রতি লাকী আক্তার নামে এক নারী লেমিনেটেড এনআইডি জমা দিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে গেলে তিনি রোহিঙ্গা বলে প্রমাণিত হয়। আর এই সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসে চলমান ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি।
জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে কমপক্ষে ৬১ রোহিঙ্গাকে ভোটার করার চেষ্টা করা হয়েছে। যাদের তথ্য নিয়ে ফরম পূরণ করে অস্থায়ী সার্ভারে ঢোকানো হয়েছিল। আর এই ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম নগরীর ডাবলমুরিং উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে।
ইসি গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটি বলছে, অভিনব কায়দায় রোহিঙ্গাদের ভোটার বানানো হতো। আর এজন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল শুক্রবার ও শনিবারকে। সাধারণত নতুন কোনো ভোটার হলে তার তথ্য ইসির সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ল্যাপটপ, আইরিশের মেশিন, সিগনেচার প্যাড, ক্যামেরা, স্ক্যানার মেশিন ও মডেম। অসাধু চক্রটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিগনেচার প্যাড ও মডেম নিজের বাড়িতে নিয়ে যেত। আর সেগুলো অফিসে নিয়ে আসতো রোববার।
আর এ সময়টায় রোহিঙ্গাদের তথ্য লোকাল সার্ভার এবং অস্থায়ী সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করতো তারা। আর এভাবেই রোহিঙ্গাদের এনআইডি সরবরাহ করা হতো।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এক্ষেত্রে ইসির হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপ ব্যবহার করা হতো। ২০১৪ সালে ৪টি ও তারও আগে তিনটি ল্যাপটপ হারিয়ে যায় ইসি থেকে।
ইসি গঠিত বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও এনআইডি অণুবিভাগের উপ-পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে যে ৬১ জন রোহিঙ্গার তথ্য লোকাল সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে।
‘তার দেওয়ার তথ্যে ভিত্তিতেই ডাবলমুরিং উপজেলা কার্যালয়ে এক সহকারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তার কাছ থেকেই ইসির হারিয়ে যাওয়া একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, আটক ব্যক্তির দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ও দালালদের আটক করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য অনুযায়ী, ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হতো।
‘এর মধ্যে এক জায়গায় ভোটার করা হতো, আর অন্য জায়গায় আর ফটো তোলার কাজটি করা হতো। এসব কাজ করেছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মচারীরা। ’
এ বিষয়ে এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই কাজটা দু’টো কারণে দুস্কৃতিকারীরা করতে পেরেছে। হয় সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার অবহেলা ছিলো, না হয় সে নিজেই এর সঙ্গে জড়িত।
‘কেননা, মডেম আর সিগনেচার প্যাড কেউ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ কিংবা সুযোগ নেই। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, শুক্র ও শনিবার তারা এগুলো বাড়িতে নিয়ে যেতেন। ’
তিনি বলেন, ১৫ জনের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে বড় কর্মকর্তাও রয়েছেন। পুরো চক্রটিকেই শনাক্ত করতে পেরেছি। দু’এক দিনের মধ্যে চমক দেখা যাবে।
ব্রিগেডিয়ার সাইদুল বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত রয়েছেন। তবে আমরা কেবল আমাদের কর্মচারীদের বিষয়টাই দেখছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা অন্য যেকোনো সংস্থাকে আমরা এক্ষেত্রে সহায়তা করবো। কেউ ছাড় পাবে না।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সোমবার বিকেলে নির্বাচন ভবন থেকে শাহানুর মিয়াকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। শাহানুর এনআইডি নিবন্ধন অনুবিভাগের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হিসেবে কর্মরত।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯
ইইউডি/এমএ