ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

রোহিঙ্গাদের এনআইডি: দায় নিতে হবে উপজেলা কর্মকর্তাকে

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
রোহিঙ্গাদের এনআইডি: দায় নিতে হবে উপজেলা কর্মকর্তাকে নির্বাচন ভবন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ভোটার তালিকায় কাউকে অন্তর্ভুক্ত করার এখতিয়ার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার। তাকেই নিবন্ধন কর্মকর্তা হিসেবে সব ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই এখন থেকে বাংলাদেশি নাগরিক না হয়েও কেউ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে এর দায় পড়বে নিবন্ধন কর্মকর্তারা ওপরেই।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মিয়ানমার থেকে আসা ৬১ জন রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অপচেষ্টা করে। যাদের তথ্য লোকাল সার্ভারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নিবন্ধন কর্মকর্তার অগোচরে এই অপকর্মটি করেন। যদিও কোথাও কোথাও কর্মকর্তারাও এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় ‘অন্তর্ভুক্ত’ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর নির্বাচন কমিশনের বিশেষ তদন্ত কমিটি যে তথ্য পেয়েছে, সেটা হলো- শুক্র ও শনিবার ভোটার করে নেওয়ার সরঞ্জাম (মডেম ও সিগনেচার প্যাড) বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই অপকর্মটি করতেন কর্মচারীরা। অথচ মডেম থাকার কথা নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে ও তার অফিসে। এ অবস্থায় তাদের সুপারিশ রয়েছে- ভোটার তালিকা আইনের যথাযথ প্রয়োগের। এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সব সরঞ্জাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছেই রাখতে বলা হয়েছে।

ভোটার তালিকা প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। যিনি নিবন্ধন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। এক্ষেত্রে ভোটার করার সরঞ্জাম-ল্যাপটপ, স্ক্যানার, সিগনেচার প্যাড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, ক্যামেরা, চোখের আইরিশ নেওয়ার মেশিন; নিবন্ধন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার তত্ত্বাবধানে রাখার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া সব কর্মকর্তাকে তাদের নিজস্ব ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিজেদেরই ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ হওয়ায়, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের দিয়েই সব কাজ করানো হতো। আস্থা রেখেই কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করাতে হয়। কিন্তু এতেই অনেক ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটে। এই অবস্থায় কর্মচারীরা যেন কোনো অপকর্ম করতে না পারে, সেদিকে সতর্কতার সঙ্গে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে দেশের সব উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩২টি বিশেষ এলাকায় কেউ যাতে বিশেষ কমিটির সুপারিশ ছাড়া ভোটার হতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে কার্যালয়ে আসা ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিকত্ব। সব সরঞ্জাম নিজের কাছে রাখতে হবে। সার্ভারে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে দিয়ে তথ্য আপলোড করানো যাবে না। আর এসব বিষয় তদারকি করতে হবে জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে।

এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এনআইডি সার্ভার আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস করা যাবে না। এজন্য সারাদেশের সব নিবন্ধন কর্মকর্তাকে সতর্ক থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের পাসওয়ার্ড, ইউজার আইডি সংরক্ষিত রাখতে, সরঞ্জাম নিজেদের তত্ত্বাবধানে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেননা, কোনো বিদেশি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে, দায় নিবন্ধন কর্মকর্তা হিসেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এড়াতে পারবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
ইইউডি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।