জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পুত্র রাহগির আলমাহি এরশাদ সাদ, উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বৈধও হয়েছেন। চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠও।
রাজনীতির বাইরে থাকা এরশাদপুত্র নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নিজের স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আর হলফনামায় যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে বাবার নাম লিখেছেন ভুল।
সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ যেমন তার ‘কর্মের’ জন্য আলোচিত, তেমনি তিনি নামের বানানটিও লিখতেন কিছুটা অপ্রচলিতভাবে। তিনি লিখতেন- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
অথচ নির্বাচনী হলনামায় পুত্র সাদ তার বাবার নামের মাঝের অংশ লিখেছেন ভুল। সেখানে লেখা হয়েছে ‘মোহাম্মদ’। অর্থাৎ হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ লিখেছেন তিনি। আর এই নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা।
তবে আইনি দিক থেকে এটা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ছোটখাট ভুলের জন্য কারো মনোনয়নপত্র বাতিল না করার জন্য নির্দেশনা আইনেই আছে। তাই ছোটখাট ভুলের জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল না করার নির্দেশনাও কমিশন দিয়েছে।
সাদ তার হলনামায় ঠিকানা হিসেবে লিখেছেন-বাসা ৪বি/২, রাস্তা-৬৭, গুলশান-২। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। বর্তমানে ও অতীতে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই।
পেশা হিসেবে এরশাদপুত্র উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে তার আয় ৮ লাখ ৩৫ হাজার ১৫৬ টাকা। আর ব্যবসা থেকে আয় ৫০ লাখ ২৮ হাজার ১৪০ টাকা।
তার কাছে নগদ টাকা আছে ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৯ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা আছে ২ কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার ২৯১ টাকার সমপরিমাণ। পোস্টাল, সেভিংস, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ও শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে ৬০ লাখ টাকা আছে তার। অলংকার আছে ৫ হাজার টাকার।
অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হলনামায় সাদ লিখেছেন, ৩৩ লাখ টাকার কৃষি জমি আছে। দালান আছে ২৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট আছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার।
দায় দেনা হিসেবে তিনি ৭ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ১ লাখ টাকা নিয়েছে মা রওশন এরশাদের কাছ থেকে। আর বাকি ছয় লাখ অগ্রিম বাড়ি ভাড়া হিসেবে দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম রাজু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় উপ-নির্বাচনটি উত্তাপ হারিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সাদের জয়ের পথটাও মসৃণ হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
আগামী ৫ অক্টোবর (শনিবার) রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এইচএম এরশাদ গত ১৪ জুলাই চিকৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। তার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সচিবালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আ. ই. ম গোলাম কিবরিয়া ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) রংপুর-৩ আসনটি শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এরশাদপুত্র রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ), বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রংপুর-৩ আসনটি সদর উপজেলা এবং ১ থেকে ৮ নম্বর ছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬২ জন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নিয়েছিল ইসি। ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। ভোট পড়েছিল ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস