ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

খালেদা জিয়ার আসনে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
খালেদা জিয়ার আসনে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি

ফেনী: ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাই)। এ আসন থেকে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।

এখানেই রয়েছে তার পৈত্রিক ভিটা। অথচ বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এ আসনের পরশুরাম পৌরসভায় পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি।  

চতুর্থ ধাপে পরশুরাম পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো প্রার্থী না দেওয়ায় ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হতে চলেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগে উচ্ছ্বাস বিরাজ করলেও বিএনপিতে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। জেলা ও উপজেলা বিএনপি বলছে নির্বাচনের পরিবেশ নেই, তাই তারা প্রার্থী দেয়নি। অপরদিকে, দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন সাংগঠনিক অদক্ষতার কারণে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। দল চাইলে প্রার্থী দিতে পারতো।
 
এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, বিএনপিকে বার বার ডেকেও নির্বাচনে আনা যায়নি। পাওয়া যায়নি একজন মেয়র প্রার্থী। মেলেনি কোন কাউন্সিলর প্রার্থীও।  

নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপিকে বলা হয়েছে, তারা যদি শঙ্কিত থাকে যেখানে চান সেখানেই তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। চাইলে পরশুরামের পাশাপাশি ফেনীতেও মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে, কিন্তু বিএনপি শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেয়নি।  
পরশুরাম পৌর নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারে গণমাধ্যমকে এমন তথ্যই দিয়েছেন ফেনী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী।  

তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, রোববার (১৭ জানুয়ারি) ছিলো মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। সকাল গড়িয়ে যখন দুপুর হয়ে যাচ্ছিলো তখনও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করি। জানতে চাই আপনাদের কোনো
মনোনয়ন জমা হয়নি। আপনারা মনোনয়ন জমা দিবেন কিনা?

বিএনপিকে জানানো হয়, আপনারা চাইলে পরশুরাম নইলে ফেনীতে গিয়েও নির্বাচন অফিসে আপনাদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেন। আর আপনারা পরশুরাম মনোনয়ন পত্র জমা দিতে চাইলে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হবে।

এরপর বিকেলেই বিভিন্ন অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। দলের পরশুরাম উপজেলা আহ্বায়ক আবদুল হালিম মানিক ও সদস্য সচিব ইব্রাহীম খলিল মনি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তারা জানান, বর্তমানে পরশুরাম উপজেলা একটি সন্ত্রাসী উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলরদের বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ বার বার হুমকি দিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের কোন পরিবেশ না থাকায় দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা এ পৌরসভা নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপির নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। তারা নির্বাচন কমিশনে কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তিনি আরও জানান, যাচাই-বাচাই আজ ১৯ জানুয়ারি এবং মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ জানুয়ারি নির্ধারিত আছে।   

নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বিএনপির এমন অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, বিএনপির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা নিজেদের সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। আর সে দায় আমাদের ওপর চাপাতে চায়। পরশুরামে কোন ধরণের অরাজক পরিস্থিতি নেই। এখানে শান্তি শৃঙ্খলা এবং সহাবস্থানের পরিবেশ বিরাজ করছে।  

পরশুরাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক পরশুরাম উপজেলা আহবায়ক আবদুল হালিম মানিক বলেন, পরশুরামে নির্বাচনে কোন ধরণের পরিবেশ নেই। এখানে যেই মেয়র প্রার্থী হবে তার প্রাণ নাশের আশঙ্কা রয়েছে। গত দু’মাস ধরে দল থেকে যার নামই এসেছে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। সর্বশেষ দল থেকে সিদ্বান্ত হয় পরশুরাম পৌরে বিএনপির আহ্বায়ক কাজী ইউসুফ মাহফুজকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতিও নিচ্ছেলেন। এ খবর পেয়ে কয়েকশ লোক মাহফুজের বাড়ি ঘেরাও করে এবং তাকে হামলার হুমকি দেন। পরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার জেলা পুলিশ সুপারকে জানালে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে সন্ত্রাসীরা কিছুটা দূরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এমন ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে পরশুরামে।  

এদিকে, অন্য কোন প্রার্থী না থাকায় মেয়র পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল পুনরায় মেয়র  নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। সাজেল চৌধুরী এর আগেও দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী হওয়ায় সব ওয়ার্ডেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।    

পরশুরাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান সবকটি পদেই একক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কার্যালয় সহ নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং কোথাও কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২১ 
এসএইচডি/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।