ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিএনপির কী সুর আমি জানি না: মাহবুব তালুকদার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
বিএনপির কী সুর আমি জানি না: মাহবুব তালুকদার মাহবুব তালুকদার

ঢাকা: জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আমি যখনই দৃঢ়ভাবে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করি তখনই আমার সমালোচকরা বলেন, উনি তো বিএনপির সুরে কথা বলেন। মুশকিলটা হচ্ছে, বিএনপির যে কী সুর, এইটা আমি জানি না।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে অংশ না নিয়ে পৃথকভাবে সাংবাদিকদের ডেকে এসব কথা বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি যে বিএনপির মুখপাত্র তা জানতে পারলাম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রেস ব্রিফিংয়ে। আমি যখনই দৃঢ়ভাবে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করি তখনই আমার বেশ কিছু সমালোচক বলেন, উনি তো বিএনপির সুরে কথা বলেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই কথা বলেছেন। মুশকিলটা হচ্ছে, বিএনপির যে কী সুর, এইটা আমি জানি না। যারা এই ধরনের কথা বলেন, তারা হয়তো বা জানেন। আমি তো জানি না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় নাই এবং গণতন্ত্র সমুন্নত নয়। যারা যেভাবেই বলেন না কেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে মানবিকতা, ভোটের অধিকার, মানবাধিকার সম্পর্কিত। এজন্য আমি বলি, গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে আমাদের জনজীবনে, জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে কথাগুলো সামনে আসে না। রাজনৈতিক দল বলে না যেইসব কথা, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি যা বলেছি, তা তাদের কাছ থেকে জেনে বুঝে বলেছি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পাঁচজনের একজন। পাঁচ আঙুলের এক আঙুল। কিন্তু আমি নিশ্চিত না, পাঁচ আঙুলের কোন আঙুল। একজনের পক্ষে কিছুই করা যায় না। আমি গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে গণতান্ত্রিকভাবেই সংখ্যালঘু হিসেবে আমি হেরে গেলাম। ’

তিনি আরও বলেন, ‘...তারপরে এমন হয়েছে, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমিশন বৈঠকে কথা বলতে গিয়েছি, সেই বৈঠকে আমাকে বক্তব্যটা রাখতে দেওয়া হয়নি। আমাকে বলা হলো, এগুলো সংবিধানবিরোধী। আরে সংবিধানই আমাকে শক্তি দিয়েছে, ভাবপ্রকাশের এবং মতামত প্রকাশের। যেই সংবিধান রক্ষা করার আমি শপথ নিয়েছি, প্রতিনিয়ত চিন্তা করেছি সেই সংবিধান রক্ষা করার। ’

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে না যাওয়া প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘বিশেষ কোনো কারণ নাই। কারণ এইটাই, আমি মুক্তভাবে কথা বলতে পারবো না। এই কথাগুলো ওইখানে মানানসই হতো না। ’

এর আগে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এটাই আমার সবশেষ প্রেস ব্রিফিং। একজন সাংবাদিক মানবাধিকার সম্পর্কে অভিমত জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই—গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়। ’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও এটাই সত্য। ’

‘নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে।

অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিদায়কালে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদে বলি, নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যে সকল অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। ’

মাহবুব তালুকাদার বলেন, ‘লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না। আমাদের কার্যকালের শেষ পর্যায়ে এসে বিগত কয়েক মাসে অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সকল সংকটের সমাধান দেখতে চাই। নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। ’

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন-ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো? অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাবিঘ্নগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। বসন্তের প্রথম দিনে ও ভালোবাসা দিবসে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। ’

আরও পড়ুন:
বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে সিইসির সঙ্গে এলেন না তালুকদার

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
ইইউডড/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।