ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

তলোয়ার নিয়ে এলে, রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে: সিইসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
তলোয়ার নিয়ে এলে, রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে: সিইসি

ঢাকা: নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টি করতে কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে, তাকে রাইফেল নিয়ে প্রতিরোধ করার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।  

রোববার (১৭ মে) নির্বাচন ভবনে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

 

সিইসি বলেন, ‘আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারব না। আপনাদেরকেও (রাজনৈতিক দলের) দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় কিন্তু আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব। আমি আপনাদেরকে স্পষ্ট করে জানাতে চাচ্ছি, ১৪ সালের নির্বাচনের দায় আমাদের ওপর চাপাবেন না, ১৮ সালের নির্বাচনের দায় আমাদের ওপর চাপাবেন না। আমরা শুধু আমাদের নির্বাচনের দায় বহন করব। নির্বাচনটাকে অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষ করতে আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করব। দলগুলো সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করব? কাজেই আমরা সাহায্য করবো। পুলিশের ওপর, সরকারের ওপর আমাদের কমান্ড থাকবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যেটি থাকবে, সেটি কিন্তু সরকার। আমি বারবার বলেছি, রাজনৈতিক দল আর সরকার এক নয়। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগেরও সভানেত্রী। কিন্তু যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী, তখন তিনি সরকারপ্রধান, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নয়। এটি বুঝতে হবে। আমরা সরকারের সাহায্য চাইব। সরকার যদি সহায়তা না করে, তাহলে নির্বাচনের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে। ’    

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা বহুবার বলেছি যে, সব রাজনৈতিক দল, বিশেষত প্রধান প্রধান দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা বাধ্য করতে পারব না। তবে সব দলকে কার্যকরভাবে অংশ নিতে আমরা বারবার আহ্বান জানিয়ে যাব। সে প্রচেষ্টা আমদের অব্যাহত থাকবে। ’

‘আজকেও আপনাদের মাধ্যমে সব দলকে আহ্বান জানাচ্ছি সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দুর্নীতি, অর্থ শক্তির বৈভব, পেশি শক্তির প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। ’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সবার অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা কাম্য নয়। ’

বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। একটি মাত্র দলের ৩০০ আসনেই জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা নেই। তবে ইতিহাস বলে সেক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরহ। ’

তিনি বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানাবিধ আশা, হতাশা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিতর্কগুলো নিরসন হওয়া প্রয়োজন। ইতোপূর্বে কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েটি উন্মুক্ত সংলাপ করেছি।  এতে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের সক্ষমতা ও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা নির্দ্বিধায় তা স্বীকার করে নিয়ে কারণগুলো বারবার ব্যাখ্যা করে বলেছি। ’

সিইসি আরও বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিষেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব। ’

তিনি বলেন, ‘এতো কিছুর পরও অপপ্রচার সমানে চলছে। ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি, সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন হচ্ছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রতিরোধ কতটা সম্ভব হবে। আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় নেতারা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও ঐকমত্য হয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি  সৃষ্টি করবেন। ’

সিইসি বলেন, ‘জাতির এই সংকটময় মূহূর্তে সর্বজন শ্রদ্ধেয় অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসন্ন নির্বাচনে মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। আমরা নির্বাচন করতে চাই অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ওপর। এজন্য সবার সহায়তা চাই। ’

৩৯ রাজনৈতিক দলকেই সংলাপের সময় দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। প্রথম দিনের প্রথম অংশে বসেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে। এতে দলের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেন। এছাড়া অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এতে উপস্থিত ছিলেন।

>>> আরও পড়ুন: সংসদ নির্বাচনে অনুকূল পরিবেশ চান সিইসি

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
ইইউডি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।