ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

নিঃশ্বাস চলে যাওয়া কেমন সেটা উপলব্ধি করেছি: শারমিন আঁখি

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
নিঃশ্বাস চলে যাওয়া কেমন সেটা উপলব্ধি করেছি: শারমিন আঁখি অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। ছবি: রাজীন চৌধুরী

সামনের ৬ মাস আমার জন্য আরো অনেক ভয়ঙ্কর। কারণ, আগামী ৬ মাস আমি শরীরে রোদ লাগাতে পারব না।

লাইটের আলো থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে হবে। নিজেকে পুরোপুরি অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখতে হবে। যার জন্য সোমবার (২৭ মার্চ) একবার রোদ গায়ে লাগিয়ে নিয়েছি।

এই ৬ মাস কোনো ধরনের আলো লাগানো যাবে না। অনেক নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। খারাপ লাগে না যে তা নয়, তবুও মানতে হবে। দুঃখের পরে যেমন সুখ আছে, তেমন খারাপের পরে ভালো আছে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমি। কথাগুলো চোখের কোনায় পানি লুকিয়ে অকপটে বলছিলেন অগ্নিদগ্ধ সেই শারমিন আঁখি।

চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি মিরপুরের একটি শুটিং বাড়ির মেকআপ রুমে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন ছোট পর্দার এই অভিনেত্রী। সেদিনই তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেই বিস্ফোরণে আঁখির হাত, পা, চুলসহ শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে যায়। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে প্লাজমা দিতে হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে শারমিন আঁখি বলেন, যখন আইসিইউতে ভর্তি হই তখন এক ধরনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম যে, আমি হয়তো আর ফিরতে পারব না। ডাক্তাররাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিঃশ্বাস চলে যাওয়া কি জিনিস সেটা আমি উপলব্ধি করেছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তখন নিজেকে নিজে সাহস দিতাম। আমাকে ফিরতে হবে।

যোগ করে আঁখি বলেন, যখন আমি শুনতে পাই আমাকে ঘিরে ভুল তথ্য ছড়িয়ে গেছে তখন আমাকে এটা আঘাত করেছে যে, আমি মারা গেলে একটা অভিযোগ নিয়ে যেতে হবে। আমি এভাবে মরতে চাই না। আমার একটা ক্লিন ইমেজ আছে। আমি নিয়মের মধ্যে জীবন-যাপন করে আসছি। সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি। আমার জীবনটা আমার মতো করে সাজিয়েছি। সেই সাহস নিয়েই পন করেছি আমাকে বাঁচতেই হবে। সেই সাহস নিয়েই আজ আপনাদের মুখোমুখি।

প্রশ্ন রেখে এই অভিনেত্রী বলেন, কে এই পোড়া হাত-মুখ দেখাবে বলুন? কেউ দেখাবে না। কোন নায়িকা মেকআপ ছাড়া বের হতে চায় না। তাহলে আমি কেন পোড়া চেহারা নিয়ে সামনে এসেছি? কারণ, আমাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে। কিভাবে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়টি না এসে কি করেছি সবার মনে এই একটাই প্রশ্ন।  

আসলে আমাদের গায়ে গন্ধ বেশি। যার কারণে এরকম ছড়ানো হয়েছে। আজ নুসরাত ইমরোজ তিশা হলে এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলত না। আমি বলেই এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন। ২০ ভাগ বার্ন যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে আমার ৩৫ ভাগ। এখন বিষয়টা যতটা সহজ ভাবে বলছি তখন ততটা সহজ ছিল না। শুধু এটুকুই বলব সামনে আমার যুদ্ধটা অনেক কঠিন।

আঁখির সামনের সংগ্রামটা কঠিন। প্রতিনিয়ত তাকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সবসময় সবকিছু ফেইস করতে পছন্দ করি। সেটা ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন। আমি বিশ্বাস করি সামনে আমার ভালো কিছু আছে যার জন্য আমাকে যুদ্ধ করতে হবে। ৭১ সালে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই ভালো কিছু হয়েছে। তেমনই আমার সামনে আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। সামনের ৬ মাসের যুদ্ধটা যদি ঠিকঠাক মতো করতে পারি তাহলে নিশ্চয় ভালো কিছু করতে পারব।

একটা বাড়ি পুরোপুরি প্রস্তুত না করেই শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখনো হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা উচিত কিনা? অভিনেত্রী বলেন, এই ঘটনার পরেও যদি নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবা হয় তাহলে এটা আমাদের ব্যর্থতা যে, আমাদের শিল্পীদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। সংগঠনগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দেবে।

আমাদের সংগঠনের এখনই সোচ্চার হওয়া উচিত উল্লেখ করে আঁখি বলেন, তাদের (ডিরেক্টর গিল্ড ও অভিনয় শিল্পী সংঘ) আমার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার আগে ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল। এখনই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে আগামীতে আরো খারাপ কিছু ঘটতে পারে। আমাদের শিল্পীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেব। আমরা আমাদের শিল্পীদের জানের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। শুধু ওই বাড়িটি নয়, সবার স্বার্থে প্রতিটি বাড়ির মালিকদের সহানুভূতি হওয়ার অনুরোধ করব।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিনটি স্মরণ করে শারমিন আঁখি বলেন, যখন ঘটনাটি ঘটে দুই হাত সামনে দিয়ে নিজের চেহারাটা কিছুটা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। আমার হাতের চামড়া সব পুড়ে যায়। মুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। বার্নের যন্ত্রণা অসহনীয়। যখন ঘটনাটি মনে হয় তখন বিষয়টি সামনে ভাসে। এগুলো বলতে ভালো লাগে না। খুব খারাপ লাগে। এটা কাউকে বোঝাতে পারব না।

আঁখি বর্তমানে আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো আছেন। ক্রমেই সেরে উঠছেন তিনি। দীর্ঘ দুই মাস হাসপাতালের বিছানায় যুদ্ধ করে অবশেষে চিরচেনা বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন সেই দিনের অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি নিয়ে। যে ঘটনা আজও তাকে ভাবিয়ে তুলছে। প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে নিজের সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

যে সময় অভিনেত্রীর শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সে সময় একটু ভালো থাকার জন্য যুদ্ধ করছেন তিনি। তার পুরোপুরি সুস্থ হতে এ বছরটি কেটে যাবে। তবে আঁখি আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ব্যস্ত হতে চান লাইট, ক্যামেরা আর অ্যাকশনে। পুরনো ছন্দে ফিরতে মুখিয়ে আছেন শারমিন আঁখি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
এনএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।