প্রিয়তমার প্রতি প্রেম, মান-অভিমান কিংবা শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ- উভয়ের ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছিলেন গানকে। সংগীতে ভুবনে ছিলেন নিপুণ কারিগর।
২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর সঞ্জীব চৌধুরীর আকস্মিক মৃত্যু হয়। এই ধরণীতে তিনি বেঁচে ছিলেন মাত্র ৪৪ বছর। তবে মৃত্যুর পরও নিজের সৃষ্টি ও দর্শনে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক সঞ্জীব চৌধুরী।
১৯৬২ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। বাবা ননী গোপাল চৌধুরী এবং মা প্রভাষিনী চৌধুরীর নয় সন্তানের মধ্যে সঞ্জীব ছিলেন সপ্তম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করেন সঞ্জীব চৌধুরী। এরপর আশির দশকে যুক্ত হন সাংবাদিকতায়।
সঞ্জীব চৌধুরী একাধারে একজন সাংবাদিক-গায়ক-সুরকার ও গীতিকার। জনপ্রিয় ব্যান্ড দলছুটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনে রয়েছে তার অবদান। রাজনীতিতেও তার ছিল ঘনিষ্ঠতা।
৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। সে সময় প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সঞ্জীব চৌধুরী গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে তাৎক্ষণিক গান লিখে সুর দিতেন আর দলবল নিয়ে রাজপথ কাঁপাতেন কোরাস গান গেয়ে।
ফিচার সাংবাদিকতার ধারা বদলে দেওয়া সঞ্জীব চৌধুরীর সাংবাদিকতা শুরু সাপ্তাহিক ‘উত্তরণ’ পত্রিকা দিয়ে। এরপর দৈনিক আজকের কাগজ হয়ে দৈনিক ভোরের কাগজে। এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই দৈনিকটিতে সূচনালগ্ন থেকে সম্পৃক্ত হয়ে জীবনের দীর্ঘ একটা সময় পার করে দেন। এরপর দৈনিক যায়যায়দিন-এর ফিচার এডিটর হিসেবে যোগ দেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি সংগীতেও তিনি মেধার পরিচয় রেখে গেছেন। পারিবারিকভাবেই ছোটবেলায় সঙ্গীত চর্চায় হাতেখড়ি হয়েছিল তার। গান গাওয়ার পাশাপাশি নিজেই গান লিখতেন, সুরও দিতেন।
সংগীতজ্ঞ বারীন মজুমদারের ছেলে বাপ্পা মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৬ সালে গঠন করেন ব্যান্ড দল দলছুট। দলছুটের অন্যতম ভোকাল সঞ্জীব চৌধুরী বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের ‘গাড়ি চলে না’ গানটি গেয়ে জয় করেন সমগ্র দেশ। ‘সাদা ময়লা রঙিলা পালে আউলা বাতাস খেলে’, ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়’, ‘আগুণের কথা বন্ধুকে বলি’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’, ‘আমি তোমাকেই বলে দেব’, ‘রিক্সা কেন আস্তে চলে না’ প্রভৃতি অসংখ্য মনমতানো গানের স্রষ্টা তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
এনএটি