আততায়ীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা বাবা সিদ্দিক। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় খের নগরে নিজের ছেলের অফিসের সামনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
তাকে দ্রুত লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। বাবা সিদ্দিকী ছিলেন সালমানের বেশ ঘনিষ্ঠজন। সালমান ও শাহরুখ খানের দ্বন্দ্ব মিটিয়েছিলেন এই বাবা সিদ্দিক।
২০০৮ সালের কথা। সে সময় বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনের একটি ঘটনা কেন্দ্র করে শাহরুখ ও সালমান খানের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ততায় পৌঁছায়। বলিউডের দুই প্রভাবশালী খান একে অন্যের ছায়াও দেখতে চাইতেন না।
সেই সময় বাবা সিদ্দিক দুই খানকে নেমন্ত্রণ করেন তার ইফতার পার্টিতে। বাবা ছিলেন সালমান-শাহরুখ দুজনেরই ঘনিষ্ঠ, তাই না করতে পারেননি দুজন। আর সেই পার্টিতে গেলে তাদের দীর্ঘ সময়ের দ্বন্দ্ব মিটান বাবা সিদ্দিক। দুই খানকে আবারও বন্ধুত্বের বাঁধনে জড়িয়ে দেন। ওই পার্টিতে অভিমানের বরফ গলে যায় সালমান-শাহরুখের। তারা একে অপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করে তিক্ততাকে ঝেড়ে ফেলেন।
এরপরে থেকে সিনেমার সেই করণ-অর্জুন যেন ফের ফিরে আসে বাস্তবে। তবে থেকে সালমান ও শাহরুখকে দেখা একসঙ্গে হাস্যরসে মেতে থাকতে দেখা গেছে বিভিন্ন শুটিং সেটে, অনুষ্ঠানে, অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে। দুজনে একে অপরের সিনেমায় কেমিও অভিনেতা হিসেবেও কাজ করেছেন। কাঁধে কাঁধ রেখে শট দিয়েছেন অ্যাকশন দৃশ্যে।
এরপর একাধিকবার বাবা সিদ্দিকের ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলেন শাহরুখ ও সালমান।
আনন্দবাজার প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ইফতারে জমকালো পার্টি দিতেন এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিক। সেখানে দেখা মিলত বলিউডের বড় বড় তারকাদের। কলকাতা থেকে উড়ে যেতেন অভিনেত্রী ঋতাভরি চক্রবর্তী। এই পার্টিতেই সালমান খানের সঙ্গে শাহরুখ খানের যে মনোমালিন্য চলছিল, তা মিটিয়ে দেন বাবা সিদ্দিক। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও সিদ্দিকের দেওয়া ইফতার পার্টিতে ছুটে যেতেন সালমান খান।
আর সেই প্রিয়জনের মৃত্যুর খবরে বিচলিত হয়ে পড়েন সালমান। রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বসে’র শুটিং মাঝপথে বন্ধ করে ছুটে যান লীলাবতী হাসপাতালে।
বাবা সিদ্দিক নিহতের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে।
তিনি বলেন, একজনকে উত্তর প্রদেশ, আরেকজনকে হরিয়ানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আরেকজন পলাতক। পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি এবং কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছি।
এদিকে, এভাবে বাবা সিদ্দিকের ওপর হামলা ও তার মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলিউডে। কারণ, সিদ্দিক খুনে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। যে দুজনকে ধরা হয়েছে, তারা স্বীকার করেছে যে, তারা বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য। লরেন্স বিষ্ণোই লাগাতার সালমানকে খুনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলি ভাইজানের পরিবারও অস্বস্তিতে।
প্রসঙ্গত, বাবা সিদ্দিক বান্দ্রা পশ্চিমের তিনবারের এমএলএ ছিলেন। ৪৮ বছর তিনি কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে দল ছেড়ে তিনি অজিত পাওয়ার অংশের এনসিপিতে যোগ দেন। গত আগস্টে কংগ্রেস থেকে তার ছেলে জিশানকে বরখাস্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
এসএএইচ