পুরোটা সময় জুড়ে দর্শক সারির পেছনে, প্রায় অন্ধকারে, পায়চারি করে বেড়ালেন এনামুল করিম নির্ঝর। এর-ওর পাশে গিয়ে এক দু’বার বসলেন যদিওবা, কিন্তু দেহজুড়ে অস্থিরতা।
মঞ্চে জীবনের টুকরো টুকরো কিছু ঘটনা নিয়ে নির্ঝর চরিত্রের একজন, সামনে গোটা জীবন নিয়ে দাঁড়িয়ে জীবন্ত নির্ঝর। নিজের সামনে নিজেকে দেখে তখন কি মনে হচ্ছিলো তার? নিশ্চয়ই মস্তিষ্ক তার ফ্ল্যাশব্যাকে ঘোরাফেরা করছিলো, মনে পড়ে যাচ্ছিলো, অস্থির লাগছিলো। তিনি একবিন্দুও তাই স্থির বসে থাকতে পারলেন না।
সময় সন্ধ্যা। রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেইম। আয়োজন ছিলো ১০১টি গানের। ২০০১ থেকে ২০১৫- এই দীর্ঘ সময়ে, অনেকটা নিরবেই, গানের সঙ্গে বলতে গেলে যুদ্ধ করে গেছেন নির্ঝর। অসংখ্য গান লিখেছেন, সুর করেছেন। নিজের যা কিছু বক্তব্য, বলতে চেষ্টা করেছেন গান দিয়েই। লিখছেনও- ‘যেহেতু সরাসরি পারবো না বলতে গানে গানে কারসাজি’। ১০১টি গান সংকলিত আকারে প্রকাশের অনুষ্ঠান ছিলো এটি। ‘এক নির্ঝরের গান’ শিরোনামে। বৃষ্টির সন্ধ্যায় নির্ঝর নিমন্ত্রণ করেছিলেন গান শোনার, গান দেখার।
কিন্তু আয়োজনস্থলে প্রবেশের মুখে পৌঁছেই দর্শকের চোখ কপালে। হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে চিকন, স্বচ্ছ শিশি। হোমিওপ্যাথি ঔষুধের। ভেতরে একটুখানিতুলো। হল অব ফেইম যেন একটুকরো হাসপাতাল! রেডক্রস চিহ্নিত লম্বা সাদা পর্দা ঝুলে পড়েছে একোণে-ওকোণে। আয়োজনই বুঝিয়ে দিলো, বাংলা গান এখন এক মুমূর্ষু শিল্প। অত্যাচারে-নিপীড়নে-স্বেচ্ছাচারিতায় আক্রান্ত হতে হতে তার ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। বাংলা গানের প্রতি একটু সহানুভূতি, কোমল হাতের স্পর্শই অন্তিমশয্যা থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
দশটি গানের ভিডিও দেখানো হলো স্ক্রিনে। প্রতিটির পরেই মঞ্চে হেঁটে আসলেন গানটির শিল্পী। ক্যাটওয়াকের আদলে। দর্শকদের জন্য এ-ও রীতিমতো এক নতুন অভিজ্ঞতা।
বহুদিন পরে, দর্শকদের সামনে এসে আরও অনেক নতুনের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিলেন নির্ঝর। মঞ্চে উঠে বলেই বসলেন, ‘শেষটা দেখতে চাই’। যখন বলছিলেন, চোখ-মুখ তার স্বভাবজাত স্থির। কিন্তু অসম্ভব দৃঢ়তা লেগে ছিলো তাতে। আশা নয়, তাই বিশ্বাস করাই চলে- নির্ঝর ফুরিয়ে যাননি। দেশীয় শিল্পকে তার আরও অনেককিছু দেওয়ার আছে। জানালেন এ রকম অনুষ্ঠান প্রতিবছরই করার পরিকল্পনা কথা।
বাংলাদেশ সময় : ১২০৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
কেবিএন