ফেসবুকে যারা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর বন্ধু তালিকায় আছেন, তারা এরই মধ্যে দেখে ফেলেছেন ‘আপকামিং বার্থডেস’-এর তালিকায় অপূর্বর নামটা। ২৭ জুন তার জন্মদিন।
অভিনেতা অপূর্বর পথচলা শুরু ২০০৬ সালে। তাকে যিনি হাত ধরে এ পথে এনেছিলেন, চিনিয়ে দিয়েছেন অলিগলি- তিনি চয়নিকা চৌধুরী। এখনও চয়নিকার নাটক মানেই অপূর্ব। দু’একটা এদিক-সেদিক হয় মাঝে মধ্যে। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের ‘ভাই-বোন’ বন্ধনে ফাটল ধরেনি এতোটুকু। চয়নিকা চৌধুরী কি-বোর্ডে আঙ্গুল রাখলেন। তার ‘গুলটু’ অপূর্বকে নিয়ে করলেন স্মৃতিচারণা।
‘২০০৬ সাল। এপ্রিলের ১,২,৩ আমার একটি টেলিছবির দৃশ্যধারণ। নাম ‘কথা ছিল অন্যরকম’। মূলগল্প অদিতি। রচনা রওনক হাসান। অভিনয় মাহফুজ, তারিন, তমালিকা আর শোয়েব। হঠাৎ আগের দিন জানতে পারলাম, শোয়েব করতে পারছে না। মাথা গরম হয়ে গেলো। কারণ সামনের পাঁচ মাস মাহফুজ আহমেদ থাকবেন না। তার ওপর তারিনের স্বামী হিসেবে দারুণ একটা চরিত্র। টেকনাফ থেকে অরুণ চৌধুরী বললেন, ‘ল্যাবএইডের বিজ্ঞাপন করে যে ছেলেটা, তাকে নিতে পারো। ভালোই করে। ’
অমিতাভ রেজার বিজ্ঞাপনচিত্রটি বহুবার দেখেছি। খুব পছন্দের। জানলাম, সেই বিজ্ঞাপনচিত্রের সোনার ছেলেটির নাম অপূর্ব। ফোন দিলাম তাকে। কথা হলো। সুন্দর করে সালাম দিয়ে কথা বললেন তিনি। ২ ও ৩ এপ্রিল আমার সেটে তার প্রথম কাজ। এর আগে অপূর্বর অভিনয় দেখিনি। তখন সে মাত্র আরমান পারভেজের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ‘রমিজের আয়না’য় ঢুকেছে। তার অভিনয় করা গাজী রাকায়েতের ধারাবাহিকও আমার দেখা হয়নি।
প্রথম শুটিংয়ে খুব নার্ভাস ছিল ও। এটাই স্বাভাবিক। তারিন আর মাহফুজের মতো তারকার সঙ্গে নতুন একটা ছেলে কাজ করতে গেলে একটু নার্ভাস তো লাগবেই। তার ওপর তারিনের চরিত্র আবার তার স্ত্রীর! স্পষ্ট মনে আছে মাহফুজ তাকে হাত ধরে ধরে তারিনের সঙ্গের দৃশ্যগুলো আর টাইটেলের শট দেখিয়ে দিয়েছিলেন। অপূর্বর ক্লোজআপের সময় তারিন উল্টোদিকে ঘুরেছিলো। অনেক হেল্প করেছিলো। বুঝে গিয়েছিলাম ছেলেটি মেধাবী।
তারপর মাহফুজ একদিন আমাকে ডেকে বললো, ‘অপূর্ব কে নিয়ে তুমি আগাও। ছেলেটি ভালো করবে। ’ এরপর বিপাশা হায়াতের লেখা ‘চতুষ্কোন’ আর ‘অন্তরমম’তে ছোট্ট চরিত্রে যুক্ত করলাম। সুন্দর করে করলো। দারুণভাবে। প্রতিটি কাজে এডিটিং প্যানেলে এসে নিজের ভুল বের করতো ও।
মে মাস। ইমদাদুল হক মিলনের ‘খুঁজে পাওয়া’ ও ‘মান অভিমান’ নাটকের মধ্য দিয়ে একক নায়ক হিসেবে অপূর্বর যাত্রা শুরু। তার সহশিল্পী ছিলেন একা ও অপি করিম। অন্য দু’টির নির্মাতা শহীদুজ্জামান সেলিম ও ফারুক শ্রাবণ।
অপূর্ব আমাকে প্রশ্ন করলো একদিন, ‘দিদি, আমাকে তুমি কতদূর দেখতে চাও?’
উত্তর দিয়েছিলাম, ‘সারা পৃথিবী তোকে চিনবে। যে দেশে দারুণ স্মার্ট, রোমান্টিক হিরো আছে, যে দারুণ অভিনয় করে, সবাই তোর ফ্যান হবে, তোর অটোগ্রাফ নেবে। সেদিন কিন্ত দিদিকে ভুলে যাস না ভাই!’
আমার মনে হয় না আর কিছু আমার লিখতে হবে বা বলতে হবে। আমাদের মিডিয়া, দেশের মানুষ, সারা পৃথিবীর বাঙালি সবাই আজ অপূর্বকে চেনে, জানে। এই অভিনেতাকে তার দিদি ডাকে ‘গুটলু’ বলে। প্রতি বছর তাকে ভাইফোঁটা দিই। আমি তার ভক্তও! শুধু অভিনয় নয়, আমার মুগ্ধতা গায়ক অপূর্ব, চিত্রকর অপূর্ব, ফটোগ্রাফার অপূর্বর প্রতিও।
২৭ জুন এই অভিনয়শিল্পীর জন্মদিন। একই দিনে তার সন্তান আয়াশেরও জন্মদিন।
অনেক আদর, ভালোবাসা, আশীর্বাদ বাবা আর ছেলের জন্য। মানুষের দুঃখের সময়ে আমি সবসময় পাশে থাকি। এটা পরিবার থেকে শিখেছি। এখন অপূর্বর সুসময়।
শুভ জন্মদিন আয়াশ ও অপূর্ব।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৫০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ