মুক্তি পাওয়ার নয় দিনেই ৩০০ কোটি রুপি আয়! ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই রেকর্ডও গড়লো এস এস রাজামৌলী পরিচালিত ‘বাহুবলী’। গত ১৮ জুলাই পর্যন্ত এর আয়ের পরিমাণ ছুঁয়েছে ৩০৩ কোটি রুপি।
তামিল আর তেলেগু ভাষায় নির্মিত ছবিটি গত ১০ জুলাই মুক্তির প্রথম দিনেই ৫০ কোটি রুপি আয়ের নতুন রেকর্ড গড়ে। ওইদিন হিন্দিতেও মুক্তি পায় এটি। হিন্দি ‘বাহুবলী’ ইতিমধ্যে ৫০ কোটি রুপি আয় করেছে। এটাও রেকর্ড। হিন্দিতে ডাব করা আর কোনো ছবির এতো আয় হয়নি। বিদেশেও রমরমিয়ে চলছে ছবিটি। স্পেশাল ইফেক্টসও ছবিটির প্রতি দর্শকদের কৌতূহল তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজেট কমের জন্য হলিউডকে না ছুঁতে পারার যে আক্ষেপ রয়েছে বলিউডে, তা ঘোচানোর দাওয়াই হতে পারে এ ছবি।
আড়াইশ কোটি রুপির বাজেটই ‘বাহুবলী’কে এনেছে আকর্ষণের কেন্দ্রে। আর মুক্তির পর ছবিটিকে ঘিরে আলোড়ন উঠেছে সারাবিশ্বেই। এ যেন চোখ ধাঁধানো অভিজ্ঞতা! ভারতীয় ছবির ক্যানভাসে এতো আয়োজনের বহর আগে দেখা যায়নি। এই বহর বর্ষা নামিয়েছে বক্স অফিসে। তিন দিনের মধ্যে ১৬০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে ‘বাহুবলী’র আয়। এর ট্রেলার উন্মুক্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউটিউবে এটি দেখা হয় ৪০ লাখ বার। শুধু কাগজে-কলমেই নয়, ব্লকবাস্টার হওয়ার সব ধরনের উপাদান মজুদ আছে ছবিটিতে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তো বটেই, এএফপি আর বিবিসিও ছবিটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ফেসবুক আর টুইটারও এর কথামালায় সয়লাব।
‘বাহুবলী’র পরিচালক এস এস রাজামৌলির ছবি মানেই বিস্ময়! একটা নতুন জগৎ। নতুন দৃশ্যপট। ভদ্রলোক প্রায় ১৪ বছর ধরে ছবি পরিচালনা করছেন। কিন্তু বছর তিনেক হলো নিজের কাজকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যেমন ভাবনার বিচারে, তেমনি কারিগরি দিক দিয়েও। ‘বাহুবলী’র মাধ্যমে নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। এর আগে কোনোও ভারতীয় ছবি কারিগর নৈপুণ্যে এতটা মসৃণ হয়নি, যতটা করে দেখাতে পেরেছেন রাজামৌলি।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ছবি বরাবরই রোমাঞ্চকর হয়। এতে দর্শক সহজেই বুঁদ হন। ‘বাহুবলী’র সাফল্যের এটাও একটা কারণ। আশি থেকে নব্বই দশকে প্রতিশোধমূলক যেসব ছবি হতো, এখানেও হুবহু তা-ই। তবে এমনি এমনি কিন্তু মুক্তির ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ১০০ কোটি রুপির ব্যবসা করেনি এটা। এর কারিশমা অন্য জায়গায়। আগে চলুন গল্পটা জানি।
দক্ষিণী তারকায় ভরা ‘বাহুবলী’ একটি পৌরাণিক কাহিনি। এটি মূলত দুই ভাইয়ের রাজত্ব জয়ের গল্প। মাহেশমতি রাজ্যের পটভূমিতে দুই প্রজন্মের গল্প। অমরেন্দ্র বাহুবলী এবং তার ছেলে মহেন্দ্র বাহুবলী। দু’টি চরিত্রেই অভিনয় করেছেন প্রভাস। ছেলে অর্থাৎ মহেন্দ্র বাহুবলীর জন্ম দিয়েই গল্প শুরু। তার গল্প ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে অমরেন্দ্রের গল্পের সঙ্গে মেশে। প্রেম-মাতৃস্নেহ-প্রতিশোধ-সিংহাসন দখলের লড়াই- সব আছে ছবিতে। অমরেন্দ্র আর তার ভাই ভল্লাল দেবের (রানা দাগ্গুবাতি) সমীকরণের ওপরই কাহিনি দাঁড়িয়ে। সেই সূত্রেই প্লটে যাবতীয় মোচড়।
কাহিনি কাণ্ড দায়সারাভার দাঁড় করালেও ডালপালা যত্ন করেই সাজিয়েছেন লেখক বিজয়েন্দ্র প্রসাদ। ছবির কেন্দ্র বাহুবলী হলেও ভল্লাল দেবের ওপরেও আলোকপাত করেছেন তিনি। বছর পঞ্চাশের ভল্লাল দেব অনায়াসে খ্যাপা ষাঁড়ের সঙ্গে লড়াই করে! ছবির দুই নারী দেবসেনা আর শিবগামীও বেশ বলিষ্ঠ। শুধু সুন্দরীই নন তারা, প্রয়োজনে অস্ত্রও ধরতে পারেন। ক্ষিপ্র হস্তে তরবারি চালাতেও দেখা গেছে তাদের।
এ ছবির ক্যানভাসে এত উজ্জল রঙের পোঁচ যে চোখে ধাঁধা লেগে যায়! প্রকৃতি আর কৃত্রিমতা হাত ধরাধরি করে রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের পাহাড়-ঝর্ণা ছবির মেজাজ খোলাতেই করে দেয়। মাহেশমতি রাজ্যের জমকালো সেট দেখলে তাক লেগে যায়! ছবির শিল্প নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন সাবু সিরিল। যিনি শিল্প নির্দেশক হিসেবে চারবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। কে কে সেন্থিল কুমারের দৃশ্যগ্রহণ ‘বাহুবলী’কে আরও শক্তিশালী করেছে।
বাহুবলী আর ভল্লাল যেখানে এক হয়ে রাজ্যের শত্রুর মোকাবিলা করেছে, সে জায়গাগুলোতে হলের আসন আঁকড়ে বসে থাকতে হবে। বাস্তবের শুটিং আর কৃত্রিম মায়াজাল ঘোর লাগিয়ে দেয়! পাহাড়ি ঝর্ণা ঘেরা অঞ্চলে বাহুবলীর বারবার পাহাড়ে চড়া আর পিছলে পড়ার জায়গাগুলো অসাধারণ। বোঝা যায়- কতটা ধৈর্য, পরিশ্রম এবং অর্থের বিনিয়োগে এ জিনিস তৈরি হতে পারে! আলাদা করে বলতে হয় এম এম কিরাভানির আবহ সংগীতের কথা।
তবে সাসপেন্সের চূড়ান্ত মুহূর্তে এসে ছবিতে কাঁচি চালিয়েছেন পরিচালক রাজামৌলি। আক্ষেপটা ঘুচবে পরের পর্বে। এটি মুক্তি পাবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে। তাই এখন দর্শকদের অপেক্ষা অমরেন্দ্র বাহুবলীর মৃত্যু-রহস্য সমাধানের। অপেক্ষা প্রভাস আর রানার দ্বৈরথেরও। অপেক্ষা রাজামৌলির নতুন মায়াদুনিয়া দেখার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
বিএসকে/জেএইচ