এটাকে কী বলা চলে? স্বেচ্ছাচারিতা নাকি অবহেলা? কথা হচ্ছে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর ঈদ আয়োজন নিয়ে। প্রতিটি চ্যানেলই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পাঁচ দিন, সাত দিন পর্যন্ত ‘বিশেষ’ আয়োজন প্রচারের ঘোষণা দিচ্ছে প্রতি বছর।
মান সংক্রান্ত প্রশ্ন তো আছেই। রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের অত্যাচারও। তবে এ দু’টো বিষয় এখন নিয়ম হয়ে গেছে এক প্রকার। দর্শক ধরেই নিয়েছেন, দেশীয় চ্যানেল মানেই আধ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে কমপক্ষে বিশ মিনিটের বিজ্ঞাপন! চল্লিশ মিনিটের একটি নাটক দেখতে হলে, রিমোট ধরে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা বসে থাকতে হবে টিভির সামনে। তা-ও যদি অনুষ্ঠানটি ঠিকমতো দেখা যায়!
কিন্তু যাচ্ছে না। নিচে ডাবল স্ক্রল, কিছুক্ষণ পরপর এল-আকৃতির বিজ্ঞাপনে মূল স্ক্রিনের আকার দাঁড়াচ্ছে অর্ধেকেরও কম। এতো উৎপাত সহ্য করে নাটক-টেলিছবি দেখা তো সম্ভবই না। দেখলেও গল্পের ধারাবাহিকতা মনে রাখা অসম্ভব এক প্রকার। যুক্ত হয়েছে চ্যানেলের নতুন আরেকটি অজুহাত- ‘টেকনিক্যাল প্রবলেম’।
ধরা যাক, একটি নাটক কিংবা টেলিছবি প্রচার হওয়ার কথা ঈদের পরদিন রাত ৮টা ২০ মিনিটে। প্রোমোও চালানো হলো ওইভাবে। পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রমোশনও করলেন। কিন্তু দেখা গেলো, কথা নেই, বার্তা নেই; শেষ মুহূর্তে গিয়ে নাটকটি আর ঠিক সময়ে প্রচার হচ্ছে না। ঠেলে দেওয়া হয়েছে দু’তিন দিন পরে। এবারের রোজার ঈদের আয়োজনে একাধিক নাটক-টেলিছবির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে।
এ তালিকায় রয়েছে জাহিদ হাসানের ‘ডিস্টার্ব’। বাংলাভিশনে ঈদের চতুর্থ দিন রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে প্রচার হওয়ার কথা ছিলো এটি। পিছিয়ে গেছে শেষ মুহূর্তে। জায়গা হয়েছে ঈদের পঞ্চম দিনে, একই সময়ে। একই ঘটনা ঘটেছে ইমরাউল রাফাতের ‘আবারও দেবদাস’-এর ক্ষেত্রে। কর্তৃপক্ষের এই ‘টেকনিক্যাল প্রবলেম’ ছাড়া আরেকটি ‘প্রবলেম’ আছে- বিজ্ঞাপনের সম্মান রাখতে গিয়ে মূল অনুষ্ঠানই ছাঁটাই করে দেওয়া। এমন ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য নাটকের ক্ষেত্রে। এ যেন আগাছাকে বাঁচাতে গিয়ে মূল গাছটারই শিকড় কেটে ফেলার মতো!
এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। দর্শকরা তাদের সমস্যার কথা লিখছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান’। কিন্তু এসব কর্তৃপক্ষের কানে পানি প্রবেশ করাতে সক্ষম হচ্ছে কি-না সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এতো নেতিবাচকের ভিড়ে ভালো দিক কি একটাও নেই? আছে। বিজ্ঞাপন বিরতিহীন নাটক। এনটিভি বেশ কয়েকটি নাটক প্রচার করেছে বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই। আরও কয়েকটি চ্যানেল একটি বা দু’টি বিরতির অনুষ্ঠান প্রচার করেছে।
কিন্তু দর্শককে দেশীয় চ্যানেলমুখী করতে শুধু এটুকু প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, মানসম্মত অনুষ্ঠান আর চ্যানেলগুলোর স্বেচ্ছাচারী মনোভাব এড়িয়ে চলা। চ্যানেলই যদি দর্শকরা না দেখে, তাহলে বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে আর কতোদিন!
বাংলাদেশ সময় : ২১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ