তিনি মমতা শঙ্কর- এটুকু পরিচয়ই যথেষ্ট। ২০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
উদয় শঙ্কর ভারতের আধুনিক নাচের পথিকৃৎ। অথচ ভারতীয় ধ্রুপদি নাচে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না। বরং ছিলো চিত্রকলায়। আঁকাআঁকির উদ্দেশ্য নিয়েই গিয়েছিলেন লন্ডন। লন্ডনের রয়েল কলেজ অব আর্টসে রাজপুত এবং মুঘল চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। বাবা শ্যাম শঙ্করই তাকে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন পেইন্টিং শিখতে। কিন্তু আঁকাআঁকি নয়, বিখ্যাত ব্যালে নৃত্যশিল্পী আনা পাভলোভার সঙ্গে পরিচয়ের পর উদয় শঙ্কর আবিষ্কার করলেন, তার প্রধান ভালোবাসা পেইন্টিং নয়, নাচ!
১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে নিজস্ব নৃত্যশৈলী দিয়ে পুরো ইউরোপ ও আমেরিকা মাতিয়েছেন উদয় শঙ্কর। তার পায়ে পায়ে ভারতীয় নাচ পৌঁছে গেছে বিশ্বদরবারে। যেটা ‘উদয় শঙ্কর ড্যান্স ফর্ম’ হিসেবেই পরিচিতি পেয়ে গেছে পরবর্তীতে। তার নাচের এ ধারাকে অনেকেই বলেন, ইস্টার্ন এবং ওয়েস্টার্ন ড্যান্সের ফিউশন। কিন্তু মমতা শঙ্কর মঞ্চে উঠেই জানালেন, ‘এটা ভুল ধারণা’। বললেন, ‘বাবা কখনও ওয়েস্টার্ন ড্যান্সকে কপি করেননি। তিনি যেটা নিয়েছেন, সেটা হচ্ছে উপস্থাপনা। যেমন- ডিউরেশন, লাইটিং ও ক্যারেক্টারগুলোর মুভমেন্ট কেমন হবে। যাতে প্রধান চরিত্রটিকে হাইলাইট করা যায়; এসব। তিনি নাচ দেখেছেন। গ্রামে গিয়ে ফোক ফর্ম দেখেছেন, ক্লাসিক্যাল স্টাইল দেখেছেন। সমস্ত নাচ থেকে নির্যাস নিয়ে তিনি একটা ফর্ম তৈরি করেছিলেন। যেটা একেবারেই একটা নিজস্ব স্টাইল। ’
ওই সন্ধ্যায় মমতার অতিথির আসনে বসে যাওয়ার একটাই উদ্দেশ্য ছিলো- বাবাকে জানানো। আরও বেশি করে চেনানো। বলা তার সম্পর্কে। দর্শকরাও জানতেন এ তথ্য। তাই তো যারা নাচ ভালোবাসেন, উদয় শংকরকে চেনেন-জানেন কিংবা জানতে চান; তারা ছুটে গেলেন গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অবধি। প্রথমে দেখানো হলো তাকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র- শুক্লা দাস পরিচালিত ‘দ্য পাওয়ার অব ড্যান্স’। পুরো হলরুম চুপচাপ, মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে, দেখছে উদয় শঙ্করের নাচ। জানছে অজানা তথ্য। সামনে বসে মমতা শঙ্করও। প্রামাণ্যচিত্র যখন শেষ হলো, যখন তার বলার পালা এলো; বললেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে উদয় শঙ্করকে মনে রেখেছে, ভারতে সেভাবে তাকে মনে রাখা হয়নি। একটি মঞ্চের নামও তার নামে কেউ করেনি। তাকে ঘিরে যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এখানকার মানুষের মধ্যে, ওখানে এর দেখা মেলে না। ’
উদয় শঙ্কর ছিলেন ব্রাক্ষ্মণ। কিন্তু পৈতে পরতেন না কখনও। পূজা করতেন না। নাচের সময়ই কেবল পৈতেটা পরতেন। মমতাই জানালেন এ কথা। বললেন, ‘নাচ তার কাছে ছিলো প্রার্থনার মতো। তিনি যখন নাচতেন, মনে হতো শিব নাচছে। তার নাচ শুধু নাচ ছিলো না, ছিলো দর্শন-জীবনবোধ। তিনি ছিলেন বিনয়ী, মাটির কাছাকাছি, তার পরিবেশনা সাধারণ দর্শক থেকে বোদ্ধা- সবাই বুঝতে পারতেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ