সরাসরি নৌকা দিয়ে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের বাড়ির ঘাটে। ঘাট থেকে বাঁশঝাড় পেরিয়ে আধপাকা বিশাল ঘর।
কবরের পাশে বাউল সম্রাটের বসবাসের ঘর। ঘরের মধ্যে রয়েছে গান গেয়ে অর্জন করা অসংখ্য পুরস্কার, নিজের লেখা বই ও ছবি। এককোণে সুসজ্জিতভাবে রাখা বাউল সম্রাটের বিছানা ও খাট।
সেখানেই কথা হচ্ছিলো শাহ নূর আলম করিম ঝলকের সঙ্গে। বাউলসম্রাটের নাতি সে। বয়স সবে ১১। এ বয়সেই শাহ আবদুল করিমের গানকেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে ঝলক। বলছিলো ‘লেখাপড়া আমার ভালো লাগে না। নানা গেয়েছে, আব্বাও গাইছেন। আমিও গান গাইতে চাই। ’
নানার মতো হতে চায় ঝলক। সবসময় বাউলসম্রাটের গানই তার কণ্ঠে। আশপাশ থেকে তার গান শুনতে আসেন অনেকে। শাহ আবদুল করিমের পুত্রবধূ শিউলি বেগম বাংলানিউজকে জানান, তার ছেলে (শাহ নূর আলম করিম ঝলক) পড়ে ক্লাস ফোরে। কিন্তু স্কুলে যেতে চায় না। সকাল-বিকেল মগ্ন থাকে গান নিয়েই।
বাউলের সম্রাটের দীর্ঘ সময়ের সহযোগী মনবাহার শাহ (৭৬) বাংলানিউজকে বলেন, ‘গানে গানে জীবন পার করে দিলেন গুরুজি। পাকিস্তান আমল থেকে তার সঙ্গী ছিলাম। এখনও ওনার বাড়িতেই আছি। বাকিটা জীবন গুরুজির বাড়িতেই কাটিয়ে দেবো। ’
শাহ আবদুল করিমের একমাত্র ছেলে নূরজাহান করিমও বাউল গানের শিল্পী। তিনিও বর্তমানে বাউল গানের ডাকে ছুটে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
শাহ আবদুল করিম গেয়েছেন হাওরের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, মারফতি, মুর্শিদী, দেহতত্ত্ব, বিরহ-বিচ্ছেদ এবং গণসঙ্গীত নিয়ে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধলআশ্রম গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান বিবি। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে তার বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের অবসান ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
কেবিএন/