বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে চতুর্থবারের মতো শুরু হলো পাঁচ দিনের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
রাজধানীর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় মিনু হকের পরিচালনায় পল্লবী ড্যান্স সেন্টারের ভরতনাট্যম নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান। নৃত্য পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন এ. বি. এম. শহিদুল ইসলাম, অনিক বোস, অন্তু মজুমদার, দীপ নারায়ণ রায়, দিপাবলী মোদক, ফারাহ্ দিবা রহমান, হাসিবুল হাসান, কস্তুরি মুখার্জী, মোঃ এমদাদুল হক, মোঃ মামুন খান, মোঃ নূরে আলম চন্দন, মিতা বিশ্বাস, মন্দিরা কুড়ি, মুনমুন বিশ্বাস, নাসিরুল ইসলাম, নাজনীন আলম, ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী, রুম্পা বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম, সালমা বেগম, স্মিতা দে, সুব্রত কুমার দাস এবং তোফায়েল আহমেদ। পরিবেশনা শেষে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল পল্লবী ড্যান্স সেন্টারের পরিচালক মিনু হকের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন।
এরপর পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের তত্ত্বাবধানে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী চিন্ময় ভৌমিক, ফাহমিদা নাজনীন, এম জে জেসাস ভুবন, মীর নকিবুল ইসলাম, নুসরাত ই জাহান, পঞ্চম স্যানাল, প্রশান্ত ভৌমিক এবং সুপান্থ মজুমদার পরিবেশন করেন তবলা কীর্তন। তাদের সঙ্গে হারমোনিয়ামে লহরা বাজিয়েছেন অজয় যোগলেকর। পরিবেশনা শেষে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের পর ছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ধ্রুপদ। পরিবেশনাটি পরিচালনা করেন সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. অসিত রায়, পরিচালকের সহযোগী হিসেবে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক শলোক হোসেন। ধ্রুপদ পরিবেশনায় ছিলেন অনামিকা সরকার, অর্পিতা চক্রবর্তী, হুমায়ূন কবীর, মনিশ বিশ্বাস, মৌসুমী বিশ্বাস, শুভেন্দু সরকার এবং তনুশ্রী সেন। তাদের সঙ্গে পাখওয়াজে সংগত করেন সংগীত বিভাগের লেকচারার আলমগীর পারভেজ। প্রথমে ছিলো দলীয় কণ্ঠে রাগ মালকোশ। এরপর আলাপ জোড় আর ঝালা যোগে চৌতালে পরিবেশন করেন সনাতন ধ্রুপদ ‘জয়তি জয়তি শ্রী গণেশ’। সুলতালে বাঁধা পরের গানটিও সনাতন ধ্রুপদ ‘শঙ্কর গীরিজাপতি’।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ‘শ্রোতাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এতো ভালো শ্রোতা পৃথিবীর আর কোথাও নেই!’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘সংস্কৃতির বিকাশ মানে রুচির বিকাশ। এ ধরনের আয়োজন মানুষের রুচি ও মনকে উন্নত করছে। পরপর চারবার এ উৎসব উদ্বোধন করলাম। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। ’ বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘এখানে আসতে হলেই যে খুব উচ্চাঙ্গসংগীতের সমঝদার হওয়া লাগবে এমন বিষয় নয়। ভালো সবকিছুই ভালো লাগে। এজন্যই আমি আসি এখানে। ’
আরেক বিশেষ অতিথি স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘একটি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন সরব থাকলে মানুষের মন আনন্দিত থাকে। এ অনুষ্ঠানে এলে এটাই বারবার অনুভব করি। ’ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর.এফ. হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এই উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করছে। ফলে নতুন নতুন শিল্পী তৈরি হবে। ’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কর্ণাটকি বাঁশি পরিবেশন করতে মঞ্চে আসেন জয়াপ্রদা রামমূর্তি। তিনি রাগ হংসধ্বনি, রাগ হিন্দোলম, বেহাগ রাগে রবীন্দ্রসংগীতের সুর, রাগ আহির ভৈরব, দেশ রাগের রবীন্দ্রসংগীত ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ বাজিয়ে শোনান। তার পরিবেশনা শেষ হয় দক্ষিণী রাগ ভাগ্যদা লক্ষ্মী বাজিয়ে। জয়াপ্রদা রামমূর্তিকে সঙ্গত করেন বাঁশিতে সুভাষ শালা, বেহালায় চক্রপানি গাঙ্গুলাকুর্থি, মৃদঙ্গমে বালা সুব্রামানয়াণ পারুপল্লি।
রাহুল শর্মা সন্তুরে দক্ষিণ ভারতের রাগ বাচস্পতির আলাপ, জো্ ঝালা এবং ঝাঁপতাল ও ত্রিতালের গৎ বাজিয়ে শোনান। রাহুল শর্মাকে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত মুকুন্দরাজ দেও। তাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। কৌশিকী চক্রবর্তী রাগ মালকোষ দিয়ে তার পরিবেশনা শুরু করেন। তিনি মাঁঝ খাম্বাজ রাগে দাদরা পরিবেশন করেন। তারপর মান্ড রাগে বন্দিশের সঙ্গে মিলিয়ে রবীন্দ্রসংগীত ‘বধূ মিছে রাগ করো না’ গেয়ে শোনান। তাকে তবলায় সহযোগিতা করেন সত্যজিৎ তালওয়ালকার এবং হারমোনিয়ামে অজয় যোগলেকার। তানপুরায় ছিলেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী ফারাবি ইসলাম ও প্রিয়াঙ্কা দাস। কৌশিকীর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজ আনাম। এরপর মঞ্চে আসেন পণ্ডিত কুশল দাস। তিনি সেতারে রাগ হেমন্ত এবং পাহাড়ি রাগে একটি ধুন বাজিয়ে শোনান। তাকে তবলায় সহযোগিতা করেন সত্যজিৎ তালওয়ালকার। তাকে উৎসব স্মারক তুলে দেন প্রকাশক শহীদুল্লাহ খান বাদল।
উৎসবের প্রথম রাতের শেষ পরিবেশনা ছিলো কর্ণাটকি সংগীত শিল্পী বিদুষী বম্বে জয়শ্রীর। তিনি রাগ হংসধনি, মায়া মালব গৌল, কলাবতী, হংস নন্দী, মিরার ভজনে শ্যাম কল্যাণ এবং দেশ রাগে তিল্লানা পরিবেশন করেন। শিল্পীর সঙ্গে বেহালায় ছিলেন শ্রীকান্ত ভেঙ্কটারাম, মৃদঙ্গমে দেলহি এস সাইরাম, ঘটমে কৃষ্ণা এস এবং তানপুরায় সুপ্রিয়া দাস ও রাজিয়া সুলতানা। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। চলবে পরদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের উৎসবে অংশ নেবেন অভিজিৎ কুণ্ডু (ধ্রুপদ), জয়ন্তী কুমারেশ (সরস্বতী বীণা), সুস্মিতা দেবনাথ (খেয়াল, বেঙ্গল পরম্পরা), পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার (ধ্রুপদ), পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার (একক তবলা), ড.বালমুরালী কৃষ্ণ (কর্ণাটকী সংগীত) ও তার সঙ্গে বাঁশিতে থাকবেন পণ্ডিত রণু মজুমদার, শুভায়ূ সেন মজুমদার (এস্রাজ) এবং পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী খেয়াল)।
প্রায় ২০০ জন সংগীত ও নৃত্যশিল্পী অংশ নিচ্ছেন এবারের আয়োজনে। অনুষ্ঠানের সম্প্রচার সহযোগী মাছরাঙা টেলিভিশন। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা ব্লুজ কমিউনিকেশনস।
বাংলাদেশ সময় : ২০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
জেএইচ