দূর পরবাসে থেকেও বহু মুক্তিকামী বাঙালি এবং অবাঙালি নাগরিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাঁপিয়েছেন বিলেতের রাজপথ। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বহু অজানা ইতিহাসের সরব সাক্ষী লন্ডন।
বাঙালিদের পাশাপাশি ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থনে বিশ্ব জনমত গঠনে ব্রিটিশ এমপি, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরাও রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ৫ মার্চ ১৯৭১-এ লন্ডনস্থ পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দেন মুক্তিকামী বাঙালিরা। ৩ এপ্রিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে স্মারকলিপি দেন মহিলা সমিতির নেতারা। ২৬ জুলাই ১৯৭১ হাউস অব কমন্সে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আটটি ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম প্রদর্শন করা হয়। ১ আগস্ট ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থনে অ্যাকশন বাংলাদেশের উদ্যোগে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয় কালজয়ী বিশাল জনসমাবেশ। ২৭ আগস্ট লন্ডনে বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশন স্থাপন।
৮ জানুয়ারি ১৯৭২-এর ভোরে হিথ্রো বিমানবন্দরে নামেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সন্ধ্যায় ক্লারিজ হোটেলে তার উপস্থিতিতে হয় জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন। বিলেতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনমত গঠন ও ’বাংলাদেশ ফান্ড’ তহবিল সংগ্রহে বিশেষ ভূমিকা পালন করে স্টিয়ারিং কমিটি অব অ্যাকশন কমিটিস, সকল আঞ্চলিক অ্যাকশন কমিটি, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, মহিলা সমিতি ইউকে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ইন ইউকে, অ্যাকশন বাংলাদেশ ও অপারেশন ওমেগা।
প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বের বিক্ষুব্ধ, প্রতিবাদী দিনমালা থেকে লন্ডন হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন- পুরো সময়কাল নিয়ে ‘লন্ডন ১৯৭১!’ শীর্ষক তিন দিনের আলোকচিত্র ও ঐতিহাসিক স্মারক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ঢাকার সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ৫ নম্বর গ্যালারিতে বিকেল সাড়ে ৪টায় এর উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিকেল সাড়ে ৫টায় ‘লন্ডন ১৯৭১- ভিনদেশে বাঙালির গৌরবগাঁথা’ শিরোনামের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম। আলোচক ১৯৭১ সালে লন্ডনে স্থাপিত বাংলাদেশ ক‚টনৈতিক মিশনের দ্বিতীয় সচিব ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমদ ও শহীদ সন্তান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।
সভাপতিত্ব করবেন প্রজেক্ট লন্ডন ১৯৭১-এর চেয়ারম্যান ফজলুল কবীর তুহিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ১৯৭১ সালে বিলেতে স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। প্রদর্শনী চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা। ‘প্রজেক্ট লন্ডন ১৯৭১’ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘লন্ডন ১৯৭১’ গ্রন্থ প্রকাশের পাশাপাশি বিলেতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের তথ্য নিয়ে ডিজিটাল আর্কাইভ উন্মুক্ত হতে চলেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন প্রজেক্ট লন্ডন ১৯৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী উজ্জ্বল দাশ। তিনি বলেন, ‘বিলেতে দীর্ঘ সাত বছর আমার ব্যক্তিগত গবেষণার ফসল এই আলোকচিত্র ও স্মারক প্রদর্শনীর আয়োজন। সুদীর্ঘ এই গবেষণা করতে গিয়ে খোঁজ পেয়েছি ব্রিটিশ আলোকচিত্রী রজার গোয়েনের। যার তোলা দুর্লভ সব ছবি ভিনদেশে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নানা অদেখা মুহূর্তের সাক্ষী। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিলেতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ইউসুফ চৌধুরীর তোলা ছবিগুলোর কথাও। পাশাপাশি সংগ্রহ করেছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্রের কাটিং, পোস্টার, প্রচারপত্র ইত্যাদি। ভিনদেশে আগুনঝরা দিনের অনন্য দলিল আলোকচিত্রগুলো। ’
উজ্জ্বল দাশ যোগ করে বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে সিলেট এবং পর্যায়ক্রমে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও বার্মিংহ্যামে এই প্রদর্শনী আয়োজনের চেষ্টা চলছে। আমাদের বিশ্বাস, এই প্রকল্পের নানা আয়োজন ও উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশের তরুণ বাঙালি প্রজন্মকে ১৯৭১ সালে ভিনদেশে অবস্থানরত বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তীব্র জেদী ভূমিকার কথামালা সম্পর্কে উৎসাহী হতে প্রেরণা যোগাবে, জানতে দেবে ভিনদেশে বাঙালির গৌরবগাঁথার ইতিহাস। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৬
জেএইচ/এসও