‘অবাক হয়েছি পদকটি পেয়ে! আজ আমার গর্বের দিন’- বললেন অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকীতে তার নামে পদক পেয়ে এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া তিন দিনের ‘সেলিম আল দীন উৎসব’-এ আসাদ আরও বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে সেলিম আল দীনের সঙ্গে কাজ করেছি। কতো শত স্মৃতি রয়েছে তাকে ঘিরে। এই শিল্পকলার একটি গোলঘরে আমরা সবাই নাটকের মহড়া করতাম। এখন কতো পাল্টে গেছে বড় বড় দালান উঠেছে। ’
সেলিম আল দীন পদক পেয়ে আপ্লুত আসাদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘সেলিম আল দীনকে কখনও কাজ ছাড়া ব্যস্ত থাকতে দেখিনি। নিজের জন্মদিন নিয়েও তিনি ব্যতিব্যস্ত হতেন না। তার আরও দশ বছর বাঁচা উচিত ছিলো। তিনি যদি আমাদের জন্য আরও কয়টি নাটক লিখে যেতেন তাহলে দেশীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আরও সুবাতাস বইতো। আমাদের মাঝে সেলিম আল দীন হয়তো শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন। ’
আসাদকে পদক প্রদান করেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রধান তৌফিক হোসেন ময়না। সম্মানী হিসেবে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন বিশেষ অতিথি সেলিম আল দীনের স্ত্রী বেগমজাদী মেহেরুন্নেছা। তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন উৎসব উদ্বোধক নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
সেলিম আল দীনের জন্মতিথি উদযাপনে যৌথভাবে এর আয়োজন করেছে ঢাকা থিয়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অতিথিরা মঞ্চের একপাশে রাখা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে সেলিম আল দীনের ৬৭তম জন্মবার্ষিকী উৎসব শুরু করেন।
সেলিম আল দীনকে নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর বলেন, ‘গুলশান হামলার মর্মান্তিক ঘটনার পর হয়তো সেলিম আল দীনের লেখনীতে উঠে আসতো প্রতিবাদী নাটক। তিনি অকালে আমাদের ছেড়ে গেছেন। আমাদের বাংলা নাটকের ধারা পরিবর্তন হয়েছিলো তার হাত ধরেই। ’
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনূর রশীদ ও সেলিম আল দীনের সহধর্মিণী মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘সেলিম আল দীনের লেখনীতে সবসময় ফুটে উঠেছে গ্রাম, মাটি, কাদার গন্ধ মাখা গল্প। সেলিম আল দীনের লেখনী চর্চার মাধ্যমেই তাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। ’
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিকেল ৪টায় ছিলো চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয় সন্ধ্যায়। নৃত্য পরিবেশন করে ভোর হলো নাট্যসংগঠনের শিশু-কিশোররা। ঢাকা থিয়েটার মঞ্চায়ন করে সেলিম আল দীন রচিত নাটক ‘নিমজ্জন’। এর নির্দেশনা দিয়েছেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে থাকছে জাবির নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের নাটক ‘কারবালার জারি’। মীর মশাররফ হোসেনের রচনায় এটি নির্দেশনা দিয়েছেন রেজা আরিফ। ২০ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে সমাপনী আয়োজনে থাকছে ‘সেলিম নাট্যমঞ্জরি’। ঢাকা থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চায়ন হবে ‘পুতুল তোমার জন্ম কী রূপ’। এতে অভিনয় করবেন শিমূল ইউসুফ।
এদিকে রবীন্দ্র-উত্তরকালের অনন্য সাধারণ নাট্যকার নাট্যাচার্য প্রয়াত সেলিম আল দীনের ৬৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পরীক্ষণ থিয়েটার হলেশুরু হয়েছে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল আয়োজিত তিন দিনের উৎসব। ‘ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙলা নাট্যের স্বর্ণালি দিন, প্রেরণা মোদের রবীন্দ্রনাথ সঙ্গী সেলিম আল দীন’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত এই উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে সংস্কৃতিজন প্রয়াত রণজিৎ কুমার বিশ্বাসের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে। এখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় জাহিদ রিপনের নির্দেশনায় বাঙলা নাট্যরীতিতে নির্মিত সেলিম আল দীনের কালজয়ী সৃষ্টি ‘হরগজ’।
এর আগে স্বপ্নদলের উদ্যোগে সকাল ৮টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যাচার্যের সমাধি অভিমুখে স্মরণ-শোভাযাত্রা ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৬
জেএমএস/জেএইচ