মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভিনদেশে নানা অদেখা মুহূর্তের সাক্ষী আলোকচিত্রগুলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্রের কাটিং, পোস্টার, প্রচারপত্র, ডাকটিকিটও আছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর উদ্বোধন করেন ‘লন্ডন ১৯৭১: ভিনদেশে বাঙালির আগুনঝরা দিনের গল্প’ শীর্ষক তিন দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
আলোকচিত্রগুলো দৃষ্টি নিবন্ধ করে প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুনের ভাষার প্রতি। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অক্ষরমালাগুলো যেন প্রতিবাদী চিৎকার। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়া আলোকচিত্রগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রবাসী নারীরাও জনমত ও তহবিল গঠন করেছেন সমানভাবে। তারাই যেন হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক।
প্রথম দিন অালোকচিত্র পরিদর্শনে দেখা গেলো বিভিন্ন বয়সী দর্শককে। সবাই দুর্লভ ছবিগুলো আগ্রহ নিয়ে দেখছেন। ছিলেন ১৯৭১ সালে বিলেতে স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বললেন আব্দুর রউফের স্ত্রী স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শাহানাজ রউফ। তার কথায়, ‘আমার স্বামী প্রথম বাংলাদেশের পতাকার ডিজাইনার। সেই মানচিত্রের ছবিও আছে এখানে। এ ছাড়া তার হাতের লেখা পত্রিকার কাটিংয়ের ছবিগুলোও রয়েছে। ’ আবেগতাড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, পাকিস্তানে তাকে নির্মম অত্যাচার করা হয়। এরপর তিনি লন্ডনে পালিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তোলা এব দুর্লভ ছবি সবাই দেখতে পাচ্ছে বলে আমার খুব ভালো লাগছে। ’
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো দামাল ছেলেরা। অন্যদিকে এই লড়াইয়ের স্বপক্ষে লন্ডনে পরিচালিত হয় বিশাল এক আন্দোলন। ‘লন্ডন ১৯৭১’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে ছিলো মিছিল, সমাবেশ, তহবিল সংগ্রহসহ নানান কিছু। সেসব মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন অনেকে। এর মধ্যে ব্রিটিশ আলোকচিত্রী রজার গোয়াইন ও ব্রিটিশ বাংলাদেশি ইউসুফ চৌধুরীর তোলা দুর্লভ ছবিগুলো সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশি তরুণ উজ্জ্বল দাশ। সেই সময়ের অনন্য সব ছবি নিয়েই তিনি আয়োজন করেছেন এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
উজ্জ্বল দাশ বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছরের গবেষণার পরিশ্রম সফল হলো। এই প্রজেক্টের জন্য দেশি-বিদেশি অগণিত বাঙালি-অবাঙালি বন্ধু, প্রতিষ্ঠান, সংগঠনসহ অসংখ্য মানুষের সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছি। সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ। ’
প্রদর্শনীর আগে ‘লন্ডন ১৯৭১: ভিনদেশে বাঙালির গৌরবগাঁথা’ শিরোনামের আলোচনা অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, ‘উজ্জ্বল ও তুহিন আমার কাছে ছবিগুলো দেওয়ার পর শিহরিত হয়েছিলাম। ’
আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আলোচক ছিলেন ১৯৭১ সালে লন্ডনে স্থাপিত বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনের দ্বিতীয় সচিব ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমদ ও শহীদ সন্তান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।
সভাপতিত্ব করেন প্রজেক্ট লন্ডন ১৯৭১-এর চেয়ারম্যান ফজলুল কবীর তুহিন। ‘লন্ডন ১৯৭১: ভিনদেশে বাঙালির আগুনঝরা দিনের গল্প’ প্রদর্শনী চলবে শনিবার (২০ আগস্ট) পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৬
জেএমএস/জেএইচ