চট্টগ্রামের বিপন্ন হালদা নদী ও এর দুই পাড়ের জেলে ও গ্রামবাসীকে ঘিরে নতুন ছবি পরিচালনার ঘোষণা দিলেন অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ক্লাবে এর মহরত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘আজকের প্রধান অতিথি হালদা। তাকে কেন্দ্র করেই এই আয়োজন। ১৯৫৮ সাল থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে হালদাকে চিনি। নদীটার ওপর যখন সেতু হলো, সেটার নির্মাণ দেখেছি। ওই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে এসেছি। সুযোগ পেলে ছবিটা দেখার চেষ্টা করবো। হালদার মধ্য দিয়ে নদীটাকে রক্ষা করার একটা বার্তা দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করছি। পরিবেশ ও নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে ছবিটি ভূমিকা রাখবে এ কামনা করি। ’
যোগ করে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা দিবস। পৃথিবীব্যাপী উদযাপিত হবে এটি। নদী ও পরিবেশকে বিষাক্ত বর্জ্যমুক্ত রাখতে এবং রাজনীতি ও সমাজকে জঙ্গীমুক্ত রাখতে চলচ্চিত্রের ভূমিকা রাখার জায়গা আছে। চলচ্চিত্র যে ভূমিকা রাখবে তা চলমান রাজনীতিকে আরও গভীর, গতিশীল ও সুন্দর করবে। হৃদয়ের ময়লা দূর করতে হলে চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করতে হবে। ’
তৌকীরকে শুভকামনা জানাতে এসেছিলেন তার শ্বশুর অভিনেতা-নির্মাতা আবুল হায়াত। তিনি বলেন, “তৌকীর যে ছবিগুলো বানায় তা জীবনঘনিষ্ঠ হয় এবং মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। এটা তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব বলে আমি মনে করি। সে পুরস্কার পাচ্ছে কি পাচ্ছে না সেটা বড় কথা নয়, মানুষ তার ছবিগুলোকে গ্রহণ করে, তারা জীবনের ছবি তৌকীরের সিনেমাতে দেখতে পায়। ‘হালদা’ও ভালো ছবি হবে আশা করছি। এর মাধ্যমে মানুষ হালদা ও নদী পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা জানবে। ”
নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে ধরনের ছবি করতে চাই, সে ধরনের ছবি একটা করতে পারা মানেই কিন্তু অনেক বড় কাজ করা। এতো প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় একটা ছবি করার জন্য যা কল্পনা করা যায় না। এর মধ্যে ছবিটা যদি ভালো হয় তাহলে আমি মনে করি তা বাড়তি পাওয়া। ভালো না হলেও ক্ষতি নেই। প্রয়াসটা তো ভালো। তৌকীর এমন একটি বিষয় নিয়ে ছবি করতে যাচ্ছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি ছবিটা আমাদেরকে একই সঙ্গে আনন্দ ও তথ্য দেবে। ’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘নদীর নাজুক অবস্থা তুলে ধরার এই প্রয়াস একটি উত্তম পদক্ষেপ। ’ সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘হালদা জীবনঘনিষ্ঠ ছবি হবে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়বস্তুর জন্য এটি বর্তমান সময়ের সেরা ছবি হতে পারে। ’
নির্মাতা সামিয়া জামান বলেন, ‘বাইরে আমাদের দেশকে তুলে ধরার জন্য এরকম আরও কিছু করার আছে। ’ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক নাসিরুদ্দিন দিলু বলেন, ‘এমন একটা বিষয় নিয়ে ছবি বানানোর সাহস করায় তৌকীরকে ধন্যবাদ। ’ চলচ্চিত্র কর্মী মোস্তফা জামাল শোভন বলেন, “কান উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্মে তৌকীরের ‘অজ্ঞাতনামা’ একসঙ্গে দেখেছি আমরা। এবার তিনি ডকু-ফিকশন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সেই অর্থে এ ধরনের কাজ খুব একটা হয় না। ফলে হালদা নিয়ে গবেষণায় এ ছবি কাজে আসতে পারে। ”
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘এমন একটি ঐতিহ্য নিয়ে ছবি হচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। হালদা একটি নদী এটা হয়তো আমরা জানি, কিন্তু সারাদেশের বেশিরভাগ লোকই জানেন না, এখানে হাজার কোটি টাকা আয়ের উৎস জড়িয়ে আছে। তাই বলা যায় এটি শুধু চলচ্চিত্রের মধ্যে থাকবে না, সবাই এ সম্পর্কে অবহিত হবেন। ’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এ ছবির মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম নদীকে ভালোবাসতে শিখবে। নদী যদি না বাঁচে আমরাও বাঁচতে পারবো না। ’ প্রযোজক সমিতির পক্ষে আরও বক্তব্য রাখেন শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ।
বক্তব্য প্রদান শেষে ছবিটির একটি গান গেয়ে শোনান সংগীতশিল্পী পিন্টু ঘোষ। এর কথা-সুরও তার। গানটির কথা এমন- ‘দেখি কতো ডুবে হায়/স্বপ্ন সাগরে ভাসাই/পোড়া বাঁশির মতো প্রেম আমারে জ্বালায়/প্রেমের আগুন কি সবারে পোড়ায়। ’ পিন্টুর সঙ্গে অনুষ্ঠানে বাজিয়েছেন সংগীতশিল্পী রোকন ইমন।
‘হালদা’র প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করবেন জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম ও নুসরাত ইমরোজ তিশা। এ ছাড়াও থাকছেন রুনা খান, ফজলুর রহমান বাবু, দিলারা জামান, শাহেদ আলী প্রমুখ। ‘হালদা’ প্রযোজনা করছে আমরা ক’জন। ছবিটির গল্প লিখেছেন আজাদ বুলবুল। চিত্রনাট্য লিখেছেন তৌকীর নিজেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
জেএইচ/জেএমএস