বাংলাদেশের সংগীতশিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লার জন্মদিন আগামী ১৭ নভেম্বর। ১২ দিন আগেই জন্মদিনের উপহার পেয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কণ্ঠশিল্পী! সিটি ব্যাংক এনএ’র কাছ থেকে ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’ গ্রহণের পর এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি।
শনিবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের উৎসব মিলনায়তনে রুনা লায়লার হাতে ক্রেস্ট ও চিত্রশিল্পী গোলাম কাদের বাবুর আঁকা একটি প্রতিকৃতি তুলে দেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। পুরস্কার হিসেবে ১ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন সিটি ব্যাংকের কান্ট্রি অফিসার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মাকসুদ। তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে ফুলের তোড়া দিয়ে।
সুরের ভুবনে ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন রুনা লায়লা। তার অভাবনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী সাফল্যকে শ্রদ্ধা জানাতে তাকে ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’ দেওয়া হলো বলে জানিয়েছেন সিটি ব্যাংক এনএ’র কর্তাব্যক্তিরা। গুণী মানুষদের পুরস্কৃত করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতেই তাদের এ প্রয়াস। এ নিয়ে দেশের সংগীতাঙ্গনের ১৩ জন গুণী শিল্পীকে সম্মানিত করলেন তারা।
রুনা লায়লাকে আরও আগেই এ পুরস্কার দেওয়া যেতে পারতো বলে তাকে কাছ থেকে দেখার কিছু অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে গিয়ে উল্লেখ করেন বর্ষীয়ান কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসি রহমান। এ প্রসঙ্গে রুনা রসিকতার সুরে বলেন, ‘আমার ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষাতেই হয়তো ছিলেন আয়োজকরা!’
পুরস্কার প্রাপ্তির পর রুনা লায়লা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তার ফুফাত বোন প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগমকে। এ ছাড়া নিজের এতোদূর আসার পেছনে মা আমিনা লায়লা ও বড় বোন দীনা লায়লার অবদানের কথা জানান তিনি। নিজের অনুভূতিতে রুনা লায়লা বলেন, ‘আজ খুব আনন্দের দিন। গর্ববোধ করছি। সিটি ব্যাংক শিল্পীদের সম্মাননা প্রদান করছে, এটা বিশাল ব্যাপার। আমাদের শিল্পীদের কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার ভক্তদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। এটাই আমাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। এখনও শেখার বাকি আছে, করার বাকি আছে। আপনারা দোয়া করবেন যেন অারও আরও অনেকদিন ভালো ভালো গান গেয়ে যেতে পারি। ’
বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন ও শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সিটি ব্যাংক এনএ’র হেড অব কর্পোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট শাম জামান। তার কথায়, ‘সিটি ব্যাংক এনএ শুধু আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং সেবা প্রদানই নয়, পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। আমাদের এমনই একটি সাংস্কৃতিক অবদান হলো গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা। এবার পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী ও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডস রেকর্ডে স্থান পাওয়া রুনা লায়লাকে সংবর্ধনা দিতে পেরে সিটি ব্যাংক গর্বিত। ’
অনুষ্ঠানে রুনা লায়লাকে কাছ থেকে দেখার কিছু অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন সংগীত পরিচালক ইমন সাহাও। অতিথি সারিতে ছিলেন রুনা লায়লার স্বামী চিত্রনায়ক আলমগীর, কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী, রিজিয়া পারভীন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে রুনার সম্মানে তার কালজয়ী বেশকিছু গান গেয়ে শোনান এ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী কোনাল। তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যরাগে’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে’, ‘এই বৃষ্টিভেজা রাতে চলে যেও না’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’ ও ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’। অতিথির আসন থেকেই গলা মিলিয়ে তাকে উৎসাহ দিয়েছেন রুনা। পরিবেশনার শেষ দিকে তার কাছে নেমে আসেন কোনাল।
বাংলা গান ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সাল থেকে গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা দিচ্ছে সিটি ব্যাংক। রুনা লায়লার আগে এটি পেয়েছেন ১২ জন শিল্পী। তারা হলেন- নীলুফার ইয়াসমিন, ফরিদা পারভীন, ফিরোজা বেগম, সনজিদা খাতুন, সোহরাব হোসেন, ফেরদৌসি রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সুবীর নন্দী, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, সৈয়দ আব্দুল হাদী ও মিতালী মুখার্জি।
আরও পড়ুন>>>
* গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা পাচ্ছেন রুনা লায়লা
* লন্ডনে আজীবন সম্মাননা পেলেন রুনা লায়লা
* সালমান খানের বাবার সঙ্গে রুনা লায়লা
* যে দুটি উপহার পেয়ে ধন্য রুনা লায়লা
* হিন্দি গান গাইলেনই না রুনা লায়লা
* চৈতালী দিনে সুরের মুর্ছনা ছড়ালেন রুনা লায়লা
* বাংলাদেশি হিসেবে আমি ধন্য
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
জেএইচ