ষাটের দশকের কথা। তখন করাচিতেই বেশি গান গাইতে যাওয়া হতো ফেরদৌসী রহমানের।
এর দু’এক বছর পরের কথা। একটি বিশাল অনুষ্ঠানে গেলেন ফেরদৌসী রহমান। ওখানে সেই কিশোরী মঞ্চে এলো। তার শুনলেন তিনি। যেমন গায়কী, তেমন তার গাওয়ার ভঙ্গি! অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তখনও এটা তেমন পরিচিত ছিলো না। এই পরিবেশনা তার কাছে মনোমুগ্ধকর লেগেছে। পরে ফেরদৌসী জেনেছেন, রুনা শুধু গানে তালিম নেননি, চার বছর নৃত্যও শিখেছেন। তার অনুরাগ ছিলো নাচের প্রতি।
শনিবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের উৎসব মিলনায়তনে সিটি ব্যাংক এনএ আয়োজিত ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে রুনা লায়লা সম্পর্কে দু’চার কথা বলতে গিয়ে এসব ঘটনা জানান ফেরদৌসী রহমান। তিনি বলেন, ‘ষাটের দশকের ওই অনুষ্ঠানে রুনা এতো সুন্দর অভিব্যক্তি দিচ্ছিলো যা ছিলো মনোমুগ্ধকর। শুরুতে অনেকে এটাতে সাঁয় না দিলেও পরবর্তী সময়ে তার স্টাইল আমাদের অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে দেখা গেলো। তারা এটা অনুসরণ করেছেন। ’
রুনা লায়লাই সত্যিকারের কিংবদন্তি মন্তব্য করে ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘আজকাল হরহামেশা যাকে তাকে কিংবদন্তি বলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি সব জায়গায় বলি, সবাই কিংবদন্তি হতে পারে না। কিংবদন্তি হাতেগোনা কয়েকজন থাকে। সবাই কিংবদন্তি হয় না। কিংবদন্তি প্রতিদিন জন্মগ্রহণ করে না। আমাকেও কিংবদন্তি বলবেন না। কারণ আমি কিংবদন্তি নই। এটা আমাকে বলা সাজে না। কিন্তু রুনা লায়লা সত্যিকার অর্থেই একজন কিংবদন্তি শিল্পী। আমার সৌভাগ্য এই শিল্পীকে আমি চিনি ওর কৈশোর থেকে। ’
এরপর সত্তর দশকের আরেকটি ঘটনার কথা জানান ফেরদৌসী। ১৯৭৪-৭৫ সালে দিল্লিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে একদিন রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছিলেন। পাশের টেবিলে হিন্দি ও উর্দু ভাষায় বেশ কয়েকজন অনেক কথা বলেছে। তার মধ্য থেকে রুনা লায়লার নামটা আলাদাভাবে আমাকে গর্বিত করেছে। এর কিছুদিন আগে সে বোম্বেতে গিয়ে গান করে এসেছে। তখন রুনা বলতে তারা পাগল! আমার দেশের একটা মেয়েকে নিয়ে বিদেশিদের মুখে প্রশংসা শুনে সত্যিই গর্ববোধ করেছি, খুব আনন্দও হয়েছে। ’
যোগ করে ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘রুনা লায়লা আমাদের সবার কাছেই প্রিয় একটি নাম। এমন কোনো লোক নেই আমাদের দেশে, যার কাছে এ নামটি অপরিচিত। তার গান শোনেনি উপমহাদেশে এমন কোনো শ্রোতা নেই। তার নাম, যশ, খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র পৃথিবীতে। যেখানে শুধু বাংলা ভাষাভাষি নয়, অন্যান্য ভাষার লোকজনও সমান উৎসাহের সঙ্গে রুনা লায়লার গান শোনে। আমরা সত্যিই গর্বিত। ও আমাদের গর্ব করার মতোই। রুনাকে বলি- তোমার গান এতো বছর ধরে কোটি কোটি মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে, তাদেরকে আপ্লুত করে রেখেছে, তুমি কোটি কোটি মানুষের মনে সংগীতের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করেছে, এজন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ’
সুরের ভুবনে ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন রুনা লায়লা। তার এই অভাবনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী সাফল্যের পেছনে সাধনাকেই কৃতিত্ব দিলেন ফেরদৌসী রহমান। তিনি বলেছেন, ‘রুনা লায়লা ভালো গান করে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার গাওয়া ও শেখার যে স্টাইল তা একদিনে হঠাৎ হয়নি। ও নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করেছে, তার ভিত্তি অনেক মজবুত। তারপরে সে মাঠে নেমেছে। রুনা ১১ বছর বয়সে প্রথম প্লেব্যাক করলেও তার শেখা কিন্তু থেমে থাকেনি। উচ্চাঙ্গসংগীত, গজল, ঠুমরি- সবকিছুতে সে সমান পারদর্শী। সাধনা ও ভিত্তিটা মজবুত ছিলো বলেই সে এখনও দারুণভাবে গেয়ে চলেছে। গানে গানে রুনা আরও বহু বছর শ্রোতাদের প্রাণ ভরিয়ে যাক। ’
আরও পড়ুন>>>
* রুনা লায়লার কাছে এ যেন জন্মদিনের উপহার!
* গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা পাচ্ছেন রুনা লায়লা
* লন্ডনে আজীবন সম্মাননা পেলেন রুনা লায়লা
* সালমান খানের বাবার সঙ্গে রুনা লায়লা
* যে দুটি উপহার পেয়ে ধন্য রুনা লায়লা
* হিন্দি গান গাইলেনই না রুনা লায়লা
* চৈতালী দিনে সুরের মুর্ছনা ছড়ালেন রুনা লায়লা
* বাংলাদেশি হিসেবে আমি ধন্য
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
জেএইচ