শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ইমন সাহার মোবাইল বেজে উঠলো। তাকে ফোনে পরিচিত একজনের প্রশ্ন- ‘দাদা কোথায় যাচ্ছেন?’ ইমনের উত্তর, ‘একটা অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছি!’ শুনে ওই ব্যক্তি খুশি হয়ে জানতে চাইলেন- ‘কে দিচ্ছে?’
এবার ঝেড়ে কাশলেন ইমন সাহা।
শনিবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের উৎসব মিলনায়তনে সিটি ব্যাংক এনএ আয়োজিত ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে রুনা লায়লা সম্পর্কে দু’চার কথা বলতে গিয়ে এ ঘটনা জানান ইমন সাহা। তিনি বলেন, ‘কাজের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। আমরা প্রায়ই অজুহাত দেখাই, জ্যামে আটকে পড়েছিলাম বলে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু কয়েকশ’ গান রেকর্ড করার সময় আজ পর্যন্ত রুনা আন্টির কাছে এ অজুহাত পাইনি। নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগে তিনি হাজির হয়েছেন। এ প্রজন্মের সব শিল্পীরা জ্যামের অজুহাত দেখালে বলি, রুনা ম্যামও এ পথ দিয়েই আসেন, কিন্তু তিনি কোনোদিন জ্যামে পড়েন না!’
নতুন প্রজন্মের গায়িকাদেরকে ইমন সাহা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কাউকে আইডল হিসেবে নিতে চাইলে আমাদের দেশে রুনা ম্যামের বিকল্প নেই। এটা সবদিক থেকেই। তার পরিবেশনা, গায়কী, ব্যবহার, সময়জ্ঞান- সবকিছুই শেখার মতো। অনেক কিছু শেখার আছে তার জীবন থেকে।
বছর কয়েক আগে সংগীতে উচ্চতর শিক্ষা নেওয়ার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে এ আর রাহমান ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন ইমন সাহা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণ সংগীতানুরাগীরা এখানে অংশ নেন। তাদের অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো ইমনের। ততোদিন একশ’রও বেশি ছবির সুর-সংগীত পরিচালনা করে ফেলেছেন তিনি।
এ আর রাহমান ইনস্টিটিউটে বন্ধুদের মধ্যে পাঞ্জাবের একজন একদিন ইমন সাহাকে প্রশ্ন করেন, ‘তোমার কি কখনও রুনা লায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে?’ তিনি উত্তরে জানালেন, দেখা হবে কি! তার সঙ্গে অনেক কাজও করেছেন। কিন্তু পাঞ্জাবের উঠতি সংগীতপিপাসুর বিশ্বাস হলো না। উল্টো মিথ্যা না বলার অনুরোধ করেন তিনি! বিস্ময়ে আবার প্রশ্ন করলেন, ‘সত্যিই তাকে দেখেছো?’
শনিবারের অনুষ্ঠানে এ ঘটনা জানিয়ে ইমন সাহা বললেন, ‘সেদিন সত্যিই গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে। ভারতের পাঞ্জাবের একটি ছেলে বিশ্বাস করতে পারছে না, আমি রুনা লায়লা ম্যামকে দেখেছি! আমি সত্যিই গর্বিত, তিনি আমার সুরে গেয়েছেন। ’
চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ ছবির রিমেকে রুনা লায়লাকে দিয়ে মুজরার আসরের উপযোগী একটি ক্ল্যাসিকাল গান করিয়েছেন ইমন সাহা। তিনি ফন্দি আঁটেন আটকানোর! তাই খুব প্যাঁচ দিয়ে একটি সুর তৈরি করলেন। তার ধারণা ছিলো, এবার হয়তো রুনা রেগে উঠবেন! কিন্তু তিনি একবার শুনেই গেয়ে দিলেন। ইমন বললেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বড়মাপের সংগীত পরিচালকদের সঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন রুনা আন্টি। আমরা সংগীতাঙ্গনের মানুষ তার কাছ অনেক কিছু শিখছি, প্রতিদিনই শিখছি। ’
ইমন সাহার জন্ম সংগীত পরিবারে। তার বাবা প্রয়াত সুরস্রষ্টা সত্য সাহা। তার সুর করা গান অসংখ্য। তবে ছোটবেলায় ‘আনারকলি’ ছবিতে রুনা লায়লার গাওয়া ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’ শুনলেই ছুটে আসতেন ইমন সাহা। এ গান অবচেতন মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, সংগীতাঙ্গনই তার ঠিকানা! তিনি বললেন, ‘আমার মতো অসংখ্য মানুষকে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। অনেকে হয়তো গানকে পেশা হিসেবে নেননি, কিন্তু গান ছাড়া তাদের দিন কাটে না। ’
আরও পড়ুন>>>
* রুনা লায়লা সত্যিকারের কিংবদন্তি: ফেরদৌসী রহমান
* রুনা লায়লার কাছে এ যেন জন্মদিনের উপহার!
* গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা পাচ্ছেন রুনা লায়লা
* লন্ডনে আজীবন সম্মাননা পেলেন রুনা লায়লা
* সালমান খানের বাবার সঙ্গে রুনা লায়লা
* যে দুটি উপহার পেয়ে ধন্য রুনা লায়লা
* হিন্দি গান গাইলেনই না রুনা লায়লা
* চৈতালী দিনে সুরের মুর্ছনা ছড়ালেন রুনা লায়লা
* বাংলাদেশি হিসেবে আমি ধন্য
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
জেএইচ