যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশাল জয় হোয়াইট হাউসের পথ নিশ্চিত করলো। ওহাইও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে তিনি হারিয়ে দিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জয়জয়কারে হলিউড তারকারা টুইটারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ভোটের ফলাফল দেখে তাদের বেশিরভাগই মর্মাহত। বুধবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টুইটারে তারা নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেছেন।
‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’খ্যাত অভিনেতা ক্রিস ইভান্স লিখেছেন, ‘এটা আমেরিকার জন্য বিব্রতকর রাত। আমরা একজন ঘৃণিত মানুষকে আমাদের মহান জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দিলাম। আমরা ভীত হওয়ার পথ তৈরি করেছি। আমি বিধ্বস্ত। ’
পপসম্রাজ্ঞী ম্যাডোনা বলেছেন, ‘আমরা হাল ছেড়ে দেবো না। ’ একই সুরে গায়িকা কেটি পেরি লিখেছেন, ‘আমরা কখনও নিশ্চুপ হবো না। থেমে থাকবেন না। কাঁদবেন না। এগিয়ে চলুন। আমরা এমন জাতি নই যে ঘৃণিত ব্যক্তি আমাদের নেতৃত্ব দেবে। ’
হিলারির সমর্থক লেডি গাগা লিখেছেন, ‘আশায় ভরপুর ঘরে আমরা শুনবো কৃষ্ণাঙ্গদের গুরুত্ব, উদারতা, সমতা ও ভালোবাসার কথা। কেউই আমাদের রুখতে পারবে না। ’ বর্ষীয়ান গায়িকা চের মনে করেন, পৃথিবী স্থিতিশীল থাকবে না। প্রযোজক পল ফিজ লিখেছেন, ‘ঘৃণার জয়। শোষকের জয়। আমি নির্বাক। বিশ্ববাসী, এই জয় আমাদের সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করে না। আমরা আতংকিত। ’
অভিনেতা জন কুসাকের ভাষ্য, ‘নতুন প্রেসিডেন্ট যদি প্রতিশ্রুতি ভাঙেন তাহলে আমাদের রাজপথে নামতে হবে। এ ধরনের ধাক্কা জনগণকে সত্যিকার অর্থে চিন্তিত করবে কী ঘটতে পারে এবং আমরা কেমন ভবিষ্যতের কথা ভাববো। ’
অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ান বললেন, ‘প্রিয় নতুন আমেরিকা, তুমি এখন মনের মৃত শিবিরে চলে গেছো। আমরা নতুন শরণার্থী। ’ গায়িকা আরিয়ানা গ্র্যান্ডের মতে, এটা পুরোপুরি আতঙ্কজনক। তিনি জানালেন, ‘আমি কাঁদছি। ’
‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’খ্যাত ব্রিটিশ-অভিনেতা কুনাল নায়ার ইমিগ্র্যান্ট হ্যাশট্যাগসহ লিখেছেন, ‘আমেরিকায় গত ১৫ বছরে এতো ভয় লাগেনি এখন যেমন হচ্ছে। ’ ‘মডার্ন ফ্যামিলি’ সিরিজের অভিনেত্রী-গায়িকা অ্যারিয়েল উইন্টার লিখেছেন, ‘আমেরিকা, তুমি ব্যর্থ। কি বাজে আর বিধ্বংসী ব্যাপার! ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কখনও স্বীকার করবো না। ’
অভিনেতা অ্যালেক ব্যাল্ডউইনের পুত্র হলিউড তারকা উইলিয়াম ব্যাল্ডউইনের মন্তব্য, ‘বিশ্বের সমতল। মঙ্গলে প্রাণ আছে। ট্রাম্প কি-না ক্লিনটনকে হারিয়ে দিলো? আমাদের দেশের হলোটা কী? ট্রাম্পের বিরক্তিকর যুক্তি, নির্বুদ্ধিতা, সাধারণ জ্ঞান ও সমবেদনার প্রতি এমন রাগ, ভয় ও অবহেলার সম্মুখীন আগে কখনও হইনি। ’
নির্মাতা অ্যাডাম ম্যাককে লিখেছেন, ‘বিদায় ব্যাংক প্রবিধান। বিদায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা। বিদায় স্বাস্থ্যসেবা। বিদায় গণতন্ত্র। ’ অভিনেত্রী রাশিদা জোন্স বলেন, ‘এটা অন্ধকার দিন। ’ আরেক অভিনেত্রী ক্রিস্টিনা অ্যাপলগেট তো ভেঙেই পড়েছেন।
র্যাপার ম্যাকেলমোর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আজ রাতে যা হলো তাতে আমি হতাশ ও মর্মাহত। আমার ভেতরটা নড়ে গেছে। ’ মার্ভিন গেইর অ্যালবাম ‘হোয়াটস গোইং অন’ পোস্ট করে আরেক র্যাপার স্নুপ ডগ জানালেন, তার মনে এখন এমনই প্রশ্ন।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মিয়া ফ্যারো টুইট করেছেন, ‘আমরা অবশ্যই সমতা, আমাদের স্বাধীনতা, বিজ্ঞান ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়বো। ’ গায়িকা লিলি অ্যালেন টুইটারে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন, ‘বিশ্বায়ন গণতন্ত্র ধ্বংস করছে এবং মার্কিনিরা এমন একজনকে ভোট দিলো যে নিজে প্রেসিডেন্ট থাকার জন্য সুবর্ণ টাওয়ার গড়ে নিজের নাম দেবে। ’
কমেডিয়ান ডেভিড ওয়ালিয়ামস মনে করেন, যারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে তারা ভীষণ অনুতপ্ত হবে। টিভি প্রযোজক শন্ডা রাইমস প্রশ্ন করেছেন, ‘এটা আমেরিকা?’ অভিনেত্রী কনি ব্রিটন মনে করেন, ‘আমরা নিজেরাই বিষণ্নতার মুখোমুখি হওয়াটা শুরু করলাম আমেরিকা। ’ অভিনেতা শেইন জ্যাকসনের মন্তব্য- ‘একটি সত্যিকারের আমেরিকার ভয়াবহ গল্প। ’
ট্রাম্পের তারকা শিবির অবশ্য ইতিহাসের অংশ হতে পেরে উচ্ছ্বসিত। অভিনেতা স্টিফেন ব্যাল্ডউইন লিখেছেন, ‘ঈশ্বরের অবদান। ভাষা পেয়েছে আমেরিকা! আমেরিকাকে আবার সেরা করতে সত্যিকারের কাজ শুরু হবে শিগগিরই। এমন অসাধারণ ইতিহাসের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। ’
‘গুড মর্নিং ব্রিটেন’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক পিয়েরস মর্গান বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান। নতুন প্রেসিডেন্টের জয়কে বিস্ময়কর কৃতিত্ব হিসেবে বর্ণনা দেন তিনি। অভিনেতা স্টিভেন সিগ্যাল লিখেছেন, ‘প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দারুণ জয়ে অভিনন্দন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকাকে আবার সেরা দেখার জন্য তাকিয়ে আছি। ’ ‘ক্লুলেস’খ্যাত অভিনেত্রী স্টেসি ড্যাশ বলেন, ‘আমেরিকা আবার সেরা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
জেএইচ