আর্মি স্টেডিয়াম (ঢাকা) থেকে: মাটির গানের সুরের মূর্চ্ছনায় গান প্রিয় ভ্রমরারা যেন হারিয়ে গিয়েছিলো ভিন্ন কোনো ভূবনে। আর হেমন্তের হালকা শিশিরসিক্ত রাত যেন জাগ্রত হলো মৃত্তিকার টানে।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে পর্দা ওঠে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের। এই আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভ্যাল চলবে পুরো তিনদিন জুড়ে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাউলশিল্পী আব্দুর রহমান একে একে মঞ্চে পরিবেশন করেন বন্দে পিরিতি শিখাইছে, আসি বলে গেলে বন্ধু ... ছাড়াও কয়েকটি জনপ্রিয় লোকগান। তার মনমাতানো গায়কি সুরে উৎসুক দর্শক-শ্রোতাদের মন মজে ওঠে।
এরপর মঞ্চে আসেন টুনটুন বাউল। রাত পৌনে ৮টা। আর্মি স্টেডিয়াম জুড়ে পুরো নীরবতা। হঠাৎ মূল স্টেজে বেজে উঠল ‘বল স্বরূপ কোথায় আমার সাধের পিয়ারী’। আর ঠিক তখনই যেন পুরো আর্মি স্টেডিয়াম ফেটে পড়লো আনন্দ উল্লাসে।
টুনটুন বাউল গাইলেন ‘ঘরে ঘরে রূপের বাতি জ্বলছে রে সদাই। ’ টুনটুন বাউলের মধু মাখা সুরে গান শুনে মাতোয়ারা স্টেডিয়াম।
একে একে তিনি গাইলেন ‘আদম বল রে তারে, মা মতি দয়াল শক্তি, তুমি দোকান তুমি দ্রব্য। আর তখন পুরো স্টেডিয়াম যেন হারিয়ে যায় অন্য কোনো সুরের ভূবণে।
অতপর মঞ্চ মাতাতে আসেন স্কটল্যান্ডের সাইমন থ্যাকার্স সাভারা কান্তি। এসেই বাংলায় বলেন, শুভ সন্ধ্যা। কেমন আছেন সবাই। তখন আর্মি স্টেডিয়াম যেন ফিরে পায় নতুন একভূবণ। যেখানে ভালোবাসার শুরু আছে, কিন্তু কমতি নেই। এরপর সাইমন থ্যাকার্স এর সাথে যুক্ত হন ভারতের রাজু দাস বাউল ও বাংলাদেশের ফরিদা ইয়াসমিন। তখন রাজধানীর স্টেডিয়ামে শুধুই সূরের মূর্চ্ছনায় হারিয়ে যাওয়া। আর দেশীয় বাদ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের গিটারের সুরের মিশেলে পুরো পরিবেশনাটি হয়ে ওঠে অনবদ্য।
রাজু দাস বাউল শুরুতেই গেয়ে শোনান 'পার করো আমারে', 'তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো/আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে', 'ভ্রমর কইও গিয়া' গানগুলো। সঙ্গে তখন যুক্ত বাংলাদেশের শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি পরিবেশন করেন 'আর কি হবে মানবজনম', 'ধন্য ধন্য বলি তারে'।
এবার কিছুক্ষণ নীরবতা। এরপর গান পরিবেশনে আসেন পাকিস্তানের বিখ্যাত শিল্পী জাভেদ বশির। শুরুতেই শাস্ত্রীয় সুরে মুগ্ধ করেন দর্শক-শ্রোতাদের। এর পর গেয়ে শোনান 'নিসা', 'তেরা নাম যাব ভি লিয়া', 'সাজনা তেরে বিনা', 'ইয়ে তুনে ক্যায়া কিয়া', 'দামাদাম মাস্ত কালান্দার।
শিল্পী জাভেদ বশিরের মন মাতানো পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ। শুরুতেই মমতাজ গেয়ে শোনান- ফকির কালু শাহের 'ভুইলো না মন তাহারে'। এর পর এই দেহ পুড়ে হৃদয় মসজিদে রবে, মনমোহন দত্তের চোখের জল আর এই মনেরই টান,খাজা বাবার আশেক যারা,আগুন-পানি-বাতাস-মূর্তির নাম মানুষ রাখছে রে, ঐ আকাশটা কাঁদছিলো যেদিন গান গেয়েছিলো বাবা সেদিন।
শিল্পী মমতাজের গান চলছে আর অন্যদিকে চলছে শ্রোতাদের আনন্দের ফোয়ারা। অবশেষে ফোক সম্রাজ্ঞী মঞ্চ থেকে বিদায় নেন এবং উপস্থাপক ঘোষণা দেন আজকের মত এখানেই শেষ হলো সূরের মুর্চ্ছনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, গ্রামীণফোনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ইয়াসির আযমান, ঢাকা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, মাইক্রোসফটের বাংলাদেশের প্রধান সোনিয়া বশির কবির,স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সান ইভেন্টসের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরীসহ প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভাল-২০১৬ এর আয়োজন করেছে সান ইভেন্টস। মেরিল নিবেদিত এ উৎসবে সহযোগিতা করছে গ্রামীণফোনের জিপি মিউজিক, ঢাকা ব্যাংক ও মাইক্রোসফট।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
এসজে/জেডএম