বাংলাদেশের সংগীত শিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লার জন্মদিন ১৭ নভেম্বর। এরই মধ্যে ভক্তদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি।
দীর্ঘ পাঁচ দশকে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন রুনা লায়লা। পাশাপাশি বাংলাদেশকে সাফল্যের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। লোকজ, পপ, রক, গজল, আধুনিক- সব ধাঁচের গানই গেয়েছেন তিনি।
বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, পাঞ্জাবিসহ ১৮টি ভাষায় রুনা লায়লার গানগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছে শ্রোতারা। তার গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। সংগীত জীবনে এরই মধ্যে বর্ণাঢ্য ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কণ্ঠশিল্পী।
চলচ্চিত্রের গানে অনবদ্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন রুনা। এ ছাড়া পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। অনন্য কণ্ঠ, অধ্যবসায়, একাগ্রতা, চর্চা, সময়জ্ঞান- সব মিলিয়ে এতো দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসেও তার তুলনা শুধু তিনিই। জন্মদিনের প্রাক্কালে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বললেন রুনা লায়লা।
বাংলানিউজ: আপনাকে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা।
রুনা লায়লা: ধন্যবাদ।
বাংলানিউজ: মঙ্গলবার ফেসবুকে দেখলাম জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা পাওয়া নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। গতবারও এটা লক্ষ্য করেছি। এর কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?
রুনা লায়লা: পরে যদি ভুলে যায় এই ভেবে হয়তো আগেভাগে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিতে চায় সবাই! গত ১৪ নভেম্বর থেকেই শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তদের কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাচ্ছি। ভারত ও আমেরিকায় যারা থাকেন তারাই আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেশি।
বাংলানিউজ: ফেসবুকে আপনি নিয়মিত। নির্দিষ্ট কোনো সময়ে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢোকেন? নাকি মেজাজের ওপর নির্ভর করে?
রুনা লায়লা: যখনই অবসর পাই ফেসবুকে যাই। কারা কি শেয়ার করলো চেক করি। নিজের ছবি আপলোড করি। নিজের গান শেয়ার দেই।
বাংলানিউজ: এবারের জন্মদিন কীভাবে কাটাবেন?
রুনা লায়লা: আলাদা কিছু হবে না। অন্যান্যবারের মতোই ঘরোয়াভাবেই পরিবারের সঙ্গে কাটবে।
বাংলানিউজ: ছোটবেলার জন্মদিনের কথা মনে পড়ে?
রুনা লায়লা: তখন তো সারাবছর অপেক্ষা করতাম কখন জন্মদিন আসবে! কারণ জন্মদিনে নতুন পোশাক পরতাম, প্রচুর উপহার পেতাম। শৈশবে এসব নিয়ে বিরাট আনন্দ হতো। এখন তো বয়স বাড়ছে আর আয়ু কমছে!
বাংলানিউজ: জন্মদিনকে কীভাবে দেখেন?
রুনা লায়লা: আলাদা কিছু না, অন্য যে কোনো দিনের মতোই মনে হয়। তবে আমার পরিবার দিনটিকে স্পেশাল করে দেয়।
বাংলানিউজ: জন্মদিন এলেই ঘটে এমন কোনো বিষয় আছে?
রুনা লায়লা: এই যে তোমরা ফোন করো, পত্রপত্রিকা আর অনলাইনে সাক্ষাৎকার বের হয়। টিভি চ্যানেলগুলো আমার গান প্রচার করে। জন্মদিনে এ প্রজন্মের শিল্পীরা আমার গান গায়, সব মিলিয়ে ভালোই লাগে।
বাংলানিউজ: জন্মদিনে কাকে মিস করেন বেশি?
রুনা লায়লা: যারা চলে গেছেন তাদের শুন্যতা অনুভব করি। আমার মা, বাবা ও বড় বোন দীনা লায়লাকে খুব মনে পড়ে। আমার মেয়ে তানি আর দুই নাতি লন্ডনে থাকে, ওদেরকেও মিস করি।
বাংলানিউজ: এবারের জন্মদিনে আপনার প্রত্যাশা কী?
রুনা লায়লা: শুধু জন্মদিন নয়, প্রতিদিনই প্রত্যাশা করি আমাদের দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাক। আমরা সবাই একসঙ্গে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। সংগীতাঙ্গনসহ সবক্ষেত্রে আরও সুন্দর আর ভালো ভালো কাজ হোক। সবার সুস্থতা কামনা করি। আমিও সবার কাছে দোয়া চাই যেন সবসময় সুস্থ থাকতে পারি, ভালো ভালো গান গাইতে পারি।
বাংলানিউজ: এখনও কি রেওয়াজ করেন নিয়মিত?
রুনা লায়লা: হ্যাঁ। তবে আমি ঘণ্টা ধরে যে রেওয়াজ করি তা না। অবসর সময়ে খালি গলায় সাধনা করি।
বাংলানিউজ: নতুন প্রজন্মের মধ্যে আন্তরিকতা বা অধ্যবসায়ের অভাব দেখা যায়। এর কারণ কী প্রযুক্তির উন্নতি?
রুনা লায়লা: আমরা শুরুর দিকে যখন গান করতাম পুরো অর্কেস্ট্রার সঙ্গে লাইভ রেকর্ডিং হতো। এ কারণে টেক দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হতো যেন একটুও ভুল না হয়। আমার সামান্য ভুল হলেই পুরো অর্কেস্ট্রাকে আবার শুরু থেকে বাজাতে হতো। এখন উন্নত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম চলে এসেছে। খাটনি কমে গেছে। চাইলে এক অক্ষরও গেয়ে জোড়া লাগানো যায়। হয়তো এটাই নতুনদের মধ্যে অলসতা এনে দিয়েছে।
বাংলানিউজ: লাইভ রেকর্ডিংয়েও গেয়েছেন, উন্নত প্রযুক্তির মধ্যেও গাইছেন। কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
রুনা লায়লা: আগে অনেক কষ্ট করে রেকর্ডিংয়ের পর গানের রেজাল্ট শুনলে খুব ভালো লাগতো। সেই সময় দ্বৈত গান হলে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে গাইতাম। ফলে অভিব্যক্তিগুলো অন্যরকম হতো। এখন তো স্টুডিওতে গেলাম, দাঁড়ালাম, গেয়ে দিলাম। সবকিছু যান্ত্রিক লাগে। ফলে আবেগটা কমে গেছে। সবখানেই এখন আবেগটা খুবই কম।
বাংলানিউজ: নতুনদের জন্য কোন পরামর্শ দেবেন?
রুনা লায়লা: একটা পরামর্শই আমি সবসময় দিয়ে যাই- গানটা ভালোভাবে শিখে আসো। ভালো গান করো, মৌলিক গান করো। গুণী শিল্পীদের গান শোনো, তাদের কঠিন গানগুলো অনুশীলন করো তাহলেই চর্চার কাজটা হয়ে যাবে, গলাটা ঠিক হবে। মনে রেখো, বেজ ঠিক করতে হবে সবার আগে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তোমরা টাকার পেছনে ছুটবে না। একটি-দুটি গান হিট হলেই ধরে নিও না আর পাওয়ার বা চাওয়ার কিছু নেই। গানকে পেশা হিসেবে নিতে চাইলে অধ্যবসায়, আন্তরিকতা ও সততা দরকার। একটি ফুলের চারাকে রোপণের পর যেমন পানি দিয়ে পরিচর্যা করতে হয়, শিল্পীও তৈরি হয় এভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে। যদি মনে করো আমি টিকে থাকতে চাই তাহলে ভালোভাবে শেখাটা জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
জেএইচ